বিতর্কিতদের বহিষ্কারে ১০ দিনেও শেষ হয়নি ছাত্রলীগের ২৪ ঘণ্টা

ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বহিষ্কারে ১৫ মে মধ্যরাতে ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেই ঘোষণার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঈদের আগে বিষয়টির সুরাহা হবে। ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত অংশ বলছে, ‘মীমাংসা’ না হলে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবেন না তাঁরা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর বিতর্কিতদের নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন পদবঞ্চিতরা। এরপর ১৫ মে দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ওই দিন মধ্যরাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিতর্কিতদের বহিষ্কারে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সেখানে চিহ্নিত ১৭ জনের মধ্যে বিতর্কিত ১৬ জনের নামও প্রকাশ করেন তাঁরা।

১৮ মে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, নিরপরাধ কারও সঙ্গে যেন অবিচার না হয়, তার জন্য বিতর্কিতদের বহিষ্কারে তাঁরা সময় নিচ্ছেন। তিনি বলেন, যে ১৬ জনের নাম সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সাতজন ইতিমধ্যে ‘দালিলিক’ প্রমাণ দিয়েছেন যে তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মিথ্যা।

আজ রোববার দুপুরে গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, সেই ১৬ জনের মধ্যে আটজন এখন পর্যন্ত নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তাদের কাছে দালিলিক তথ্য-প্রমাণ দিয়েছেন। বাকি যে আটজন এখনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি, ঈদের আগে তাঁদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। তিনি দাবি করেন, ‘যে আটজন নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে দালিলিক তথ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছেন, সেই তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বাকি আটজন যেহেতু নিজেদের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ জমা দেননি, তাদের পদ শূন্য হচ্ছে—এটা নিশ্চিত। ঈদের আগেই এটি করা হবে। আপা (প্রধানমন্ত্রী) বিষয়টি নিয়ে খুব সিরিয়াস। আজকে আমরা এ বিষয়ে আপার সঙ্গে কথা বলব।’

বিতর্কিতদের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া না হলে ও আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হলে ঈদের ছুটিতে বাড়ি না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়া নেতারা। অংশটির নেতৃত্বে থাকা সাঈফ বাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি নিয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির এখনো মীমাংসা হয়নি। আমাদের সঙ্গের বন্ধু-বান্ধবরা বিভিন্ন ভালো চাকরি করছে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিই ধ্যান-জ্ঞান। এত বছর রাজনীতি করার পর এখানে যদি কোনো মূল্যায়ন না পাওয়া যায়, বাড়িতে গেলে এলাকার লোকজনকে কী বলবে? এলাকার লোকজনের কাছে মুখ দেখানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। এ ঘটনা নিয়ে আন্দোলনে নামেন পদবঞ্চিতরা। পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও মধুর ক্যানটিনের সেই ঘটনায় ২০ মে রাতে পাঁচজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঈদের আগে?
কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে গত বছরের ৩১ জুলাই ঘোষণা করা হয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ৷ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির মেয়াদ এক বছর। সেই হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ রয়েছে আর দুই মাস। কিন্তু এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি ছাত্রলীগের এই ইউনিটের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তবে দুই দিন আগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কমিটি জমা দেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলছেন, ঈদের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। তিনি বলেন, ‘দুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা কমিটি জমা দিয়েছেন। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাঁদের আরও আগে কমিটি জমা দেওয়া উচিত ছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পরদিনই তাঁদের কমিটি জমা দেওয়া উচিত ছিল। আমরা চাই, কমিটি হওয়ার পর কোনো বিতর্ক না হোক। ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি সম্পর্কে কারও কোনো অভিযোগ আছে কি না, জানতে আজ রাতে আমরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেব।’