১২ জেলায় ৭০ মামলার আসামি হাজির হলেও বাদী আসেননি

পরিবারের সদস্যসহ আদালতে হাজিরা দিতে উপস্থিত হন দিন মজুর সাইফুল ইসলাম। রাজশাহী, ২৬ মে। ছবি: প্রথম আলো
পরিবারের সদস্যসহ আদালতে হাজিরা দিতে উপস্থিত হন দিন মজুর সাইফুল ইসলাম। রাজশাহী, ২৬ মে। ছবি: প্রথম আলো

নয় শতক জমি কিনে ১২ জেলায় ৭০ মামলার শিকার সেই দিনমজুর সাইফুল ইসলাম আজ রোববার রাজশাহীর নির্বাহী হাকিম আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন। এ সময় ওই একই মামলায় আরও ১৯ আসামিও উপস্থিত ছিলেন যাদের মধ্যে ১০ জন নারী। তবে বাদীর দেখা মেলেনি।

এই সব নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মামলার বাদীকে মারধর করার হুমকি দিয়েছেন। এই মামলার বাদী হচ্ছেন তানোরের মুন্ডুমালা পৌর এলাকার করিমপুর চোরখোর মহল্লার হাফেজ মোড়লের ছেলে বাদেশ। এই নারী-পুরুষেরা প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তানোর থেকে মামলার হাজিরা দিতে রাজশাহীর আদালতে উপস্থিত হন। তবে এ সময় মামলার বাদীর কোনো হাদিস পাওয়া যায়নি।

সাইফুল ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, সাইফুলকে ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্যই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলী নগরের শফিকুল ইসলাম নামে-বেনামে এই মামলাগুলো করেছেন। তাঁর ভাই রফিকুল ইসলামও এতে জড়িত রয়েছেন। এ ব্যাপারে গত শুক্রবার প্রথম আলোকে ‘৯ শতক জমির জন্য ১২ জেলায় ৭০ মামলা দিনমজুরের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরে ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির কর্মকর্তারা তানোরের গিয়ে সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন, সাইফুলের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো হয়রানিমূলক। এতে তাঁরা সাইফুলের এই মামলায় আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।

রোববার রাজশাহীর নির্বাহী হাকিম আদালতে গিয়ে দেখা যায়, মামলার হাজিরা দিতে আসা সাইফুলের পরিবার ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে আদালতের সামনে অনেক মানুষ ভিড় করেন। অনেকেই দেখতে চান এই মামলার বাদী হয়েছে কে। কিন্তু অনেক খুঁজেও মামলার বাদীর দেখা মেলেনি।

তবে বাদীকে না পাওয়া গেলে না এলেও আসামি হিসেবে হাজিরা দিতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী হারেসা বেগম। হারেসের কোলে সেই শিশু সন্তান, যার জন্মের প্রসব বেদনা উঠেছিল আদালতের মধ্যেই। এসেছেন সাইফুলের মেয়ে শাকিলা খাতুন, ভাতিজা রয়েল ও রুবেল। তাদের দুজনের স্ত্রী আয়েশা ও সাথী, সাইফুলের শাশুড়ি বাদেনুর বেগম, শ্বশুর বিশু, দুলা ভাই আবদুস সামাদ, তাঁর স্ত্রী রুবিনা, ছেলে কামরুল, তার স্ত্রী সোনিয়া, সামাদের আরেক ছেলে সাদ্দাম, সাদ্দামের স্ত্রী নার্গিস, সাইফুলের চাচাতো ভাই মোয়াজ্জেম, তার স্ত্রী শিরিন, প্রতিবেশী শওকত আলী ও তাঁর স্ত্রী রোকসানা। এই আসামিদের মধ্যে পাঁচ নারীর কোলেই রয়েছে শিশু সন্তান। মামলার আসামির মধ্যে শুধু সাইফুলের ভাই হাজির হতে পারেননি। কারণ এই মামলার কথা শুনে তিনি হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

এ ছাড়া আদলতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় ব্র্যাকের মানবাধিকার আইনসহায়তা কর্মসূচির রাজশাহী জেলা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদেরকে।

আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ব্র্যাকের কর্মীরা সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে সব ঘটনা জেনেছেন। এখন মামলার কাগজপত্র নিয়ে তারা খোঁজ করবেন জেলায় জেলায় হওয়া মামলাগুলোর কী অবস্থায় রয়েছে। সব জেলাতেই তাদের প্যানেল আইনজীবী রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই সাইফুলকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।