পাঠাও চালক ইসমাইল কেন খুন হলেন?

নিহত পাঠাও চালক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইসমাইল ছবি: সংগৃহীত
নিহত পাঠাও চালক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইসমাইল ছবি: সংগৃহীত

মোটরসাইকেল নেওয়ার জন্যই পাঠাও চালক ইসমাইল হোসেন জিসানকে হত্যা করা হয়। ইসমাইল হোসেনকে হত্যার দায় স্বীকার করে ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন প্রধান আসামি হাসিবুল হোসেন।
প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজানুর ইসলাম।

পাঠাও চালক ইসমাইল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করতেন। ঢাকার শ্যামলী এলাকার একটি বাসায় থাকতেন ইসমাইল। ১২ মে পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ২৩ মে গাজীপুরের গাছা থানার কামারজুড়ি এলাকা থেকে ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ইসমাইলের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন।

এখন পর্যন্ত এই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন হাসিবুল হাসান এবং তাঁর স্ত্রী সজনি আক্তার। 


কেন এই পাঠাও চালক খুন
ইসমাইলের বাবার দেওয়া তথ্যমতে, ইসমাইল সপ্তাহের তিন দিন ঢাকার শ্যামলীর বন্ধুর বাসায় থাকতেন। বাকি তিন দিন থাকতেন গাজীপুরে গাছা থানার কাথোরায় মা-বাবার সঙ্গে। পড়াশোনার পাশাপাশি বেসরকারি একটি মুঠোফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন ইসমাইল। চাকরির টাকা দিয়ে বছর দেড়েক আগে হোন্ডা কোম্পানির হাংক নামের মোটরসাইকেল কেনেন। ইসমাইল বছরখানেক আগে থেকে নিয়মিতভাবে পাঠাও অ্যাপস ব্যবহার করে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন।

ইসমাইলের বাবা সাব্বির হোসেন আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক সমস্যা থাকায় ইসমাইল নিজে আয় করার চেষ্টা করতেন। ১২ মে থেকে ইসমাইলকে তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কোথাও খোঁজ না পেয়ে গাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু এরপরও খোঁজ না পেয়ে যান র‍্যাবের কাছে। র‍্যাব সদস্যরা তাঁকে জানান, তাঁর ছেলে ইসমাইলের সর্বশেষ অবস্থান গাজীপুরেই। পরে তিনি শেরেবাংলা নগর থানায় যোগাযোগ করেন। শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডিও করেন। ২৩ মে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরাই প্রধান আসামি হাসিবুল হোসেনের বাসা থেকে তাঁর ছেলে ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সুজানুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইসমাইলকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তা তাঁদের তদন্তে উঠে এসেছে। প্রধান আসামি হাসিবুল ঢাকা থেকে ইসমাইলের মোটরসাইকেলে ওঠেন। হাসিবুলকে গাজীপুরের গাছা থানার কামারজুড়ি গ্রামে তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন ইসমাইল। ৮০০ টাকা ভাড়ায় ইসমাইল হাসিবুলকে তাঁর বাসায় নিয়ে আসতে রাজি হন। ইফতারের কিছু সময় আগে হাসিবুলের বাসায় আসেন ইসমাইল। তখন হাসিবুল ইসমাইলকে ইফতারি করার প্রস্তাব দেন। ইসমাইল তাতে রাজি হন। হাসিবুল নিজের বাসায় তাঁর দুজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ইসমাইল হত্যা করেন।

শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ ঢাকার আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রধান আসামি হাসিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে (হাসিবুল) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হাসিবুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইসমাইলের অপো ব্রান্ডের মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে ওই এলাকার একটি হোটেল থেকে ইসমাইলের হাংক মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। ১২ মে রাত ১২ টার সময় ইসমাইলের হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়। পরে একটি বস্তায় ছয়টি ইট বাঁধা হয়। সেই বস্তা রশি দিয়ে ইসমাইলের কোমরে বেঁধে ফেলা হয়। তখন ইসমাইলের লাশ সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেয়। সেফটিক ট্যাংকের মুখ সিমেন্টের তৈরি স্ল্যাব দিয়ে আটকানো হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা সুজানুর ইসলাম বলেন, পাঠাও চালক ইসমাইল খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন হাসিবুল, তাঁর স্ত্রী সজনি এবং হাসিবুলের বন্ধু শাওন। এই খুনে জড়িত আরও একজন পলাতক আছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তা সুজানুর ইসলাম জানান, হাসিবুল তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইসমাইলকে বাসায় নিয়ে হত্যা করেন আসামিরা। প্রধান আসামি হাসিবুল বেকার। নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই তাঁর। অপর আসামি শাওনও বখাটে যুবক। পেশাদার অপরাধী।

ইসমাইলের বাবা সাব্বির হোসেন জানান, তাঁর ছেলের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। নিজের টাকায় মোটরসাইকেল কিনে তাঁর ছেলে লেখাপড়া করছিলেন। বিনা দোষে তাঁর ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চান তিনি।
চার ভাইবোনের মধ্যে ইসমাইল সবার বড় ছিলেন।