অবিক্রীত থাকল ২৩ হাজার টিকিট

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে শেষ দিনেও টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়। গতকাল সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়েস্টেশনে।  ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে শেষ দিনেও টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়। গতকাল সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়েস্টেশনে। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রতিবছর ঈদের আগে রেলপথের টিকিট কেনা নিয়ে থাকে যাত্রীদের ভোগান্তি। এবার ভোগান্তি কমাতে পাঁচ জায়গা থেকে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা, অর্ধেকসংখ্যক টিকিট অনলাইন ও অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। তবুও গত পাঁচ দিনে যাত্রীদের সেই পুরোনো ভোগান্তি একটুও কমেনি।

অ্যাপে ও কাউন্টারে প্রত্যাশিত টিকিট না পেয়ে প্রতিদিনই ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন টিকিট–প্রত্যাশীরা। গতকাল রোববার টিকিট বিক্রির শেষ দিনে কমলাপুর কাউন্টারে এসেও কাঙ্ক্ষিত টিকিট না পেয়ে অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

৫ জুনকে ঈদ ধরে গতকাল শেষ দিনে বিক্রি হয় ৪ জুনের টিকিট। রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ দিনে কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়েছে ৫২ হাজার ৬০১টি টিকিট। আর অবিক্রীত আছে ১২ হাজার ৫৩টি টিকিট। অনলাইনে গত পাঁচ দিনে ৪৩ হাজার ৫৭৩টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। অনলাইনে অবিক্রীত আছে ১১ হাজার ৫৩টি টিকিট। গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৩ হাজারের বেশি টিকিট অবিক্রীত আছে। ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনসহ প্রতিদিন প্রায় ৩১ হাজার টিকিট বিক্রি করার কথা।

রেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে প্রথমে প্রথম শ্রেণি, ঘুমিয়ে যাওয়ার কামরা, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষের (এসি) আসনের টিকিট বেশি বিক্রি হয়। মানুষ এসব টিকিটের পেছনে ছোটার কারণে নন–এসি শ্রেণি ও কাছের দূরত্বের স্টেশনের টিকিট কম বিক্রি হয়। এ ছাড়া ঈদের আগের রাতে যেসব ট্রেন ছেড়ে যায়, সেগুলোর টিকিটের চাহিদা কম থাকে। ফলে ২০–২৫ হাজার টিকিট অবিক্রীত থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। যাঁরা নিজেদের চাহিদামতো টিকিট পাননি, তাঁরা যাত্রার আগের পাঁচ দিন অবিক্রীত টিকিট সংগ্রহ করবেন। প্রতি ঈদেই এ প্রবণতা দেখা যায়। অবিক্রীত এই টিকিটগুলো আবার অনলাইন ও কাউন্টার থেকেই বিক্রি করা হবে।

ঈদের ছুটিতে মো. উজ্জ্বল মিয়া যাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তাঁর লাগবে দুটি টিকিট। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘রেলের অ্যাপে তো লগইনই করা যায় না। দেড় ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও টিকিট পেলাম না। শনিবারও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করতে করতে মোবাইলের একবার চার্জ শেষ করেছি। তা–ও পাইনি টিকিট।’

উজ্জ্বল মিয়া এবং তাঁর আশপাশের টিকিট–প্রত্যাশীদের পাশে অবস্থান করছিলেন অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের কর্মকর্তারা। মাথার ওপরে থাকা মনিটরের তথ্য দেখিয়ে তাঁরা জানালেন, দেড় ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। টিকিট–প্রত্যাশী উজ্জ্বল মিয়া বললেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও আমরা টিকিট পেলাম না। অথচ প্রায় চার হাজার টিকিট নাকি অনলাইনেই বিক্রি শেষ। এত টিকিট কিনল কে?’

অ্যাপের টিকিট না পাওয়া প্রসঙ্গে সিএনএসের নির্বাহী পরিচালক মো. জিয়াউল আহসান সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, একসঙ্গে অনেক মানুষ টিকিট কাটতে অ্যাপে ঢুকছে বলে এ সমস্যা হয়েছে। সারা দেশের ২০ থেকে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রির সাপোর্ট এই অ্যাপের আছে। আজ থেকে অ্যাপে এই চাপটি থাকবে না।

রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে, সে সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সজাগ আছে, কাজও করছে। আমরা এই সমস্যাগুলো সীমিত করার চেষ্টা করব।’ সামনের ঈদে এ সমস্যাগুলো হবে না বলে তিনি আশা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল হক গতকাল ভোর চারটার দিকে টিকিট কাটতে কমলাপুরে এসেছিলেন। যাবেন রংপুর। প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোগান্তি কমাতে পাঁচ জায়গা ও অ্যাপে টিকিট বিক্রি করা হলো। এত উদ্যোগ নিয়ে লাভ তো কিছুই হয়নি। ভোগান্তি আগের মতোই রয়েছে।’