ঈদে লঞ্চের কেবিনের টিকিট হাওয়া!

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী ২১৫টি লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের প্রায় ২০ হাজার টিকিট বুকিং হয়েছে। এদিকে যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যের লঞ্চগুলোতে কেবিনের আগাম টিকিটের জন্য শেষ মুহূর্তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে লঞ্চে লঞ্চে খোঁজ নিচ্ছেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, কেবিনের টিকিটগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন লঞ্চের মালিকেরা। তাঁরা নিজেদের পরিচিত লোকদের জন্য টিকিট রেখে দেন। আর সাধারণ যাত্রীরা আগেভাগে সংগ্রহ করতে এসেও টিকিট না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯ মে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরদিন থেকে টার্মিনালের কাউন্টারে ঈদে ঘরে ফেরার আগাম টিকিট বিক্রি হবে। কিন্তু অধিকাংশ কাউন্টারই বন্ধ ছিল। যাত্রীরা গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। টিকিট বিক্রি হয়েছে লঞ্চে। আর অধিকাংশ কেবিনের টিকিট বুকিং হয় গেছে বলে জানানো হয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে ৩০ মে থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। গতকাল রোববার ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক যাত্রী টিকিট সংগ্রহ করতে আসেন। প্রায় সব কটি লঞ্চের কেবিনের টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে। লঞ্চের যাত্রীরা কেবিনের টিকিট না পেয়ে অনেকে নিরাশ হয়ে ফিরেছেন।

পলাশী থেকে আসা আফজাল হোসেন জানান, তিনি ৩০ মে বরিশাল যাবেন। অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের দ্বিতীয় শ্রেণির ডাবল কেবিনের আগাম টিকিটের জন্য গেলে লঞ্চের কর্মচারী ইলিয়াস আলী জানান, ওই দিনের কেবিন খালি নেই। মাস্টার রুম আছে, সেখানে পরিবার নিয়ে থাকা যাবে। ভাড়া লাগবে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এত টাকা দিয়ে যাওয়া তাঁর জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যাবে।

আরেক যাত্রী রাসায়নিকের ব্যবসায়ী ফোরকান মিয়া বলেন, ‘১ জুন বাড়ি যাব। টার্মিনালে টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলো বন্ধ পেয়েছি। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর এমভি জামাল-২ লঞ্চের কেবিনের আগাম টিকিটের জন্য খোঁজ নিতে গেলে লঞ্চের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন জানান, ১ জুন থেকে ঈদের আগে কোনো কেবিন খালি নেই। এগুলো সপ্তাহখানেক আগেই বুকিং হয়ে গেছে। গত সপ্তাহের বুধবারও এসেছিলাম। সেদিন বলেছিল, বিক্রি শুরু হয়নি। এখন ভাবছি সড়কপথে বাড়ি ফিরব।’

>

ঈদ উপলক্ষে ৩০ মে থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
প্রায় সব লঞ্চের কেবিনের টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে।
কেবিনের টিকিট না পেয়ে অনেকে নিরাশ হয়ে ফিরেছেন।
কেবিনের টিকিটগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন লঞ্চের মালিকেরা
মালিকেরা নিজেদের পরিচিত লোকদের জন্য টিকিট রেখে দেন

বরগুনাগামী পূবালী-১ লঞ্চের কর্মচারী সলিম মিয়া জানান, ঈদের আগে তাঁদের লঞ্চের কোনো কেবিন খালি নেই। এসব কেবিন মালিক পক্ষ বুকিং দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের আগাম টিকিট তাঁদের কাছে থাকে না। সেগুলো ঈদ মৌসুমে মালিকেরাই নিয়ন্ত্রণ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশালগামী এক যাত্রী জানান, প্রতিবছর ঈদের আগে গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বাস ও ট্রেনের বিভিন্ন রুটের আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়। অথচ লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে যত অনিয়ম। গত সপ্তাহেও লঞ্চ মালিকপক্ষ ঘোষণা দিয়েও লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রি করেনি। গতকাল দুপুরে এসে বরিশালগামী বেশ কয়েকটি লঞ্চে খোঁজ নিয়ে কোথাও লঞ্চের কেবিনের আগাম টিকিট পাননি।

লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সদস্য ও ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশীদ বলেন, প্রতিদিনের চেয়ে ঈদ মৌসুমে কেবিনের যাত্রী বেশি থাকে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী লঞ্চ কম। যাঁরা প্রতিদিন লঞ্চে যাতায়াত করেন, তাঁরা আগে থেকেই টিকিট বুকিং দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এ সপ্তাহের শেষের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করবে। অথচ আমাদের দাবি করা শ্যামবাজার এলাকায় টার্মিনালসহ দুটি ঘাটে বাড়তি পন্টুন স্থাপন করা হয়নি। এ ছাড়া ওয়াইজঘাট এলাকায় পটুয়াখালী রুটের ঘাটের সামনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার কনটেইনার রাখার কারণে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।’

অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের উপপরিচালক কায়সারুল ইসলাম বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে লঞ্চমালিকদের চাহিদা মোতাবেক নতুন পন্টুন সংযোগ করা হচ্ছে। তা ছাড়া মাসখানেক আগে থেকেই পন্টুনের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।