খাদ্যের সঙ্গে দলেও ভেজাল দেখছেন নাসিম

মোহাম্মদ নাসিম
মোহাম্মদ নাসিম

পবিত্র রমজানে খাবারে ভেজাল নিয়ে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘আজ আমাদের সব ক্ষেত্রেই হয়তো কিছুটা হতাশা আছে। ভেজাল আছে অনেক ক্ষেত্রে। এখন আমাদের রাজনীতিতেও ভেজাল ঢুকে গেছে। এমনকি আমার দলের মধ্যেও ভেজাল ঢুকে গেছে।’

সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ খাদ্য ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে মোহাম্মদ নাসিম এ কথা বলেন। ভেজাল ও মাদকবিরোধী আন্দোলন এবং সোশ্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সোয়াব) যৌথভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলকে ‘ভেজালমুক্ত’ করার প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘ভেজালের বিরুদ্ধে তো আমাদের অভিযান চলছেই। আগামী কাউন্সিলে দলকে ভেজালমুক্ত করার চেষ্টা করে যাব ইনশা আল্লাহ। নব্য ভেজালকারী, নব্য আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরা আমাদের জন্য ক্ষতিকর, দলের জন্য ক্ষতিকর।’

খাদ্যে যারা ভেজাল দিচ্ছে, সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নাসিম। তিনি বলেন, ‘আমার সভাপতিত্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভা করেছি কিছুদিন আগে। খাদ্যমন্ত্রী, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো সেখানে ছিল। আমি তাদের বলেছি, আমাদের দাবি হলো ৭৪–এর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকর করা।’ সেই সঙ্গে ‘কৃষককে সহযোগিতার জন্য’ চাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার ব্যাপারে মত দেন তিনি।

একই সঙ্গে খাদ্যে ভেজালরোধে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘একজন ভেজালকারী সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। সবচেয়ে বড় জঙ্গি, সবচেয়ে বড় ঘাতক। এখানে অনেক ব্যবসায়ী আছেন। আপনারা কেন ভেজালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান না? আপনাদের নানা ব্যবসায়ী সমিতি আছে, এফবিসিসিআই আছে। আপনারা কেন নিজেরা আন্দোলন গড়ে তোলেন না? আপনারা কেন বলেন না যে, কেউ যদি ভেজাল দিয়ে অভিযুক্ত হন, তাহলে তিনি সমিতির সদস্য হতে পারবেন না।’

বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘খাদ্যে ভেজালদানকারীরা যেন রাজনৈতিক প্রশ্রয় না পায়। প্রশাসনের কোনো গাফিলতির কারণে যেন ছাড় না পায়। আইনের আওতায় আসার পরে যেন কোনোভাবেই মাফ না পায়।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতির ভেজাল রাজনীতিকে হত্যা করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে। খাদ্যে ভেজালদানকারীরা মানুষ মারার ব্যবসা করে। সুতরাং খাদ্যে ভেজালদানকারীদের থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। রাজনীতির ভেজাল থেকে রাজনীতি-গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।’

বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী আফজাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি আ ব ম ফারুক প্রমুখ।

আ ব ম ফারুক বলেন, ‘খাদ্যদ্রব্যে যদি ভেজাল না থাকত তাহলে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে আসত। মানুষের গড় আয়ু বাড়ত ১৫ বছর। হাসপাতালগুলোতে কিডনি ও লিভারের রোগীর উপচে পড়া ভিড় থাকত না।’ এ ছাড়া খাবারে কাপড়ের রং ব্যবহারের বিপদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে আমরা যেসব খাবার খাই তাতে ১৯টার বেশি টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করা হয়। যার বেশির ভাগ ক্যানসারের জন্য দায়ী।’