লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ওষুধের হিসাবে গরমিল, টাকার অঙ্কে কোটি ছুঁই

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের স্টোরের ৩৪ পদের ওষুধের হিসাবে গরমিল ধরা পড়েছে। গরমিল হওয়া ওষুধের মূল্য প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এসকেএফ কোম্পানির প্রস্তুত ৩২০ মিলিগ্রামের অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট জেমি ফ্লোক্সাসিন ট্যাবলেট নেই ৫০ হাজার পিচ। প্রতিটি ৬৪ টাকা মূল্যের হিসাবে শুধু এই ওষুধের মূল্য ৩২ লাখ টাকা।

ওষুধের এই গরমিলের বিষয়টি তিন সদস্যবিশিষ্ট স্পেশাল সার্ভে কমিটির ২২ মের লিখিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই ঘটনায় হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. সাহেদুল হককে ২৩ মে নীলফামারীর ডিমলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাহেদুল হক স্টোরের বর্তমান ওষুধের স্থিতি বুঝিয়ে দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ওষুধ সরবরাহের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ সময় তিনি স্টোরের ওষুধের মজুত ও সরবরাহসংক্রান্ত রেজিস্ট্রারসমূহ পরীক্ষা করেন। এতে স্টোরের ওষুধের স্টক রেজিস্ট্রার, ইস্যু ভাউচার, সরবরাহ বইসহ অন্য কাগজপত্রে ওভার রাইটিং ও কাটাকাটি দেখতে পান। এ ধরনের অসংগতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ৩০ এপ্রিল লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) মো. আবদুল বাসেতকে প্রধান করে তিন সদস্যের স্পেশাল সার্ভে কমিটি করে দেন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আমিনুর রহমান ও সদস্য সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) আবদুল হামিদ। এই কমিটির সদস্যরা ২২ মে হাসপাতালের স্টোরের ৩৪ ধরনের ওষুধের হিসাবের গরমিল রয়েছে মর্মে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এরপর লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ স্টোরের ওষুধের হিসাবের গরমিলের বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে ২২ মে অবহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক কারণে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অমূল্য চন্দ্র সাহা স্টোরকিপার মো. সাহেদুল হককে নীলফামারীর ডিমলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের আদেশ দিয়ে এক পত্র জারি করেন।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) মো. আবদুল বাসেত বলেন, স্টোরের ওষুধ সার্ভের সময় মজুত ও সরবরাহ পর্যালোচনায় ৩৪ ধরনের ওষুধের গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জেমি ফ্লোক্সাসিন, সেফুরাক্সিম, মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেটসহ ৩৪ ধরনের ওষুধের স্টক ও সরবরাহের সঙ্গে কোনো মিল নেই। তবে তিনি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘গরমিল হওয়া ওষুধগুলো ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরবরাহ হওয়া। এ সময় আমি এখানে এই পদে কর্মরত ছিলাম না।’ তিনি বলেন, গরমিল হওয়া ওষুধের মধ্যে প্রতিটি ৬৪ টাকা মূল্যের জেমিফ্লোক্সাসিন ট্যাবলেট থাকার কথা ছিল ৫৫ হাজার। পাওয়া গেছে মাত্র ৫ হাজার। শুধু এই একটি ওষুধের দাম বর্তমান বাজারদর হিসাবে ৩২ লাখ টাকা। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অধিকতর তদন্ত হলে মোট কী পরিমাণ অর্থের ওষুধের হিসাবে গরমিল হয়েছে, সেটা জানা যাবে। ধাপে ধাপে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, গরমিল হওয়া ওষুধের মূল্য বর্তমান বাজার দরে প্রায় ৯৫ লাখ টাকা।

তবে স্টোরকিপার মো. সাহেদুল হক নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, ‘যেহেতু আমি স্টোরকিপার তাই আমাকেই দায়ী করে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়াতে রয়েছি।’