বাহারি খাবারে কারখানার রং, তেলাপোকা হাঁটে

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে অভিযান চালিয়ে পুরোনো মাংসে ক্ষতিকর রং ব্যবহার দেখতে পান র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে এক মাংস বিক্রেতাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  প্রথম আলো
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে অভিযান চালিয়ে পুরোনো মাংসে ক্ষতিকর রং ব্যবহার দেখতে পান র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে এক মাংস বিক্রেতাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলো
>

খাবারে ক্ষতিকর রং মেশানো এবং নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে মাংস বিক্রির অপরাধে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বাহারি নাম। দেখতেও লোভনীয়। কিন্তু এসব খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কারখানার রং। কোথাও আবার খাবারের ওপর হাঁটছে তেলাপোকা।

গতকাল সোমবার জিগাতলা মোড়ে সীমান্ত স্কয়ার মার্কেটের ফুডকোর্টে অভিযান চালিয়ে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখতে পান, চমকপ্রদ নামের বিভিন্ন ফাস্টফুডে দেদার শিল্পকারখানার রং মিশিয়ে তা চটকদার করে তোলা হচ্ছে।

সীমান্ত স্কয়ার মার্কেটের সাততলায় ফুডকোর্টে অভিযান চালিয়ে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে খাবার তৈরির অপরাধে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

দুপুরে বিএসটিআই ও র‍্যাব-২-এর যৌথ নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, এসব দোকানের খাবারগুলোতে জীবন্ত তেলাপোকাও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দুই-তিন দিন আগের সেদ্ধ করা চাল পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ফ্রাইড রাইস তৈরি করা হতো।

সীমান্ত স্কয়ার মার্কেটের সাততলায় ৩০টি দোকান নিয়ে ফুডকোর্ট। বেলা দেড়টার দিকে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে পৌঁছালে হুড়োহুড়ি করে অন্তত ২৫ দোকানি তাঁদের দোকান বন্ধ করে সটকে পড়েন। পরে বাকি পাঁচটি দোকানে অভিযান চালিয়ে চারটিতেই শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত রং খুঁজে পাওয়া যায়।

অভিযানের শুরুতেই বেলা স্পাইসড ফুড নামের একটি দোকানে দেখা গেল প্লাস্টিকের কাগজ বিছিয়ে খোলা জায়গায় সেদ্ধ করা চাল ফেলে রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির রান্নাঘর ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা। জানতে চাইলে দোকানের কর্মকর্তারা বলেন, সকালে রান্না করা হয়েছে। ইফতারের সময় ফ্রাইড রাইস হিসেবে এসব বিক্রি করবেন তাঁরা। রান্নাঘরে নোংরা পরিবেশের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য, ইফতারের আগেই তারা রান্নাঘর পরিষ্কার করে ফেলবে। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর মাইসা ইতালিয়ান ফুড নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু হয়। সেখানে নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম খাবারে জীবন্ত তেলাপোকা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত রং খুঁজে পান। এ ছাড়া দোকানটির ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবারের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পরে এই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ক্ষতিকর এই রং ফ্রাইড চিকেন, স্পাইসি চিকেন, গ্রিল চিকেন, চিকেন ললিপপ, চিকেন উইংস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীরা।

ইট ওয়ে নামের আরেকটি দোকানে গিয়েও শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত রং খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া এই দোকানের ফ্রিজে দুই-তিন দিন আগের রান্না করা খাবারও পাওয়া যায়। দোকানটির রান্নাঘরও ছিল অস্বাস্থ্যকর। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পরে হট প্লেট ও ফোরসোলা কিউ কিউ স্মুথিস নামের দুটি দোকানে অভিযান চালিয়ে একটিতে ক্ষতিকর রং ও অন্যটিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া আইসক্রিম সংরক্ষণ করতে দেখা যায়। পরে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হট প্লেটকে ৫০ হাজার ও ফোরসোলা কিউ কিউ স্মুথিসকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সীমান্ত স্কয়ারের ফুডকোর্টে অভিযান শুরুর আগে প্রথমে পুরো সাততলায় চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাকি ২৫টি দোকানের মালিককে প্রায় দুই ঘণ্টা খুঁজেও পাওয়া যায়নি। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে এসব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা দোকানগুলো বন্ধ রাখতে সীমান্ত স্কয়ার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সীমান্ত স্কয়ার কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। পরবর্তী অভিযানের আগে দোকানগুলো খুলতে দেবে না বলে আমাকে জানিয়েছে।’

সারওয়ার আলম আরও বলেন, ফুডকোর্টে তাঁরা তিন ধরনের অপরাধ পেয়েছেন। এর মধ্যে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর রং ফ্রাইড চিকেনসহ বিভিন্ন খাবারে দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন খাবারে তেলাপোকা ও নোংরা পরিবেশ দেখা গেছে এবং কেউ কেউ পচা-বাসি খাবার বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তাই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এর আগে বেলা একটার দিকে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পুরোনো মাংসে ক্ষতিকর রং ব্যবহার করার অপরাধে সোলেমান খান নামের এক মাংস বিক্রেতাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভেড়ার মাংসকে খাসির মাংস এবং ভারত থেকে আমদানি করা হিমায়িত মহিষের মাংস গরুর মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রির অপরাধে ফারুক হোসেন ও মো. রতনকে দুই মাস করে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রির করার অপরাধে আরও দুটি মাংসের দোকানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।