সোনারগাঁয়ে দিনদুপুরে মেঘনা ভরাট

সোনারগাঁয়ের চর রমজান এলাকায় এভাবেই ড্রেজার দিয়ে মেঘনা ও এর শাখা নদী ভরাট করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
সোনারগাঁয়ের চর রমজান এলাকায় এভাবেই ড্রেজার দিয়ে মেঘনা ও এর শাখা নদী ভরাট করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

২০ মে থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সোনারগাঁ উপজেলায় মেঘনা নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযানে কয়েকটি বড় শিল্পকারখানার সীমানাপ্রাচীর ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের আগে ও পরে মেঘনা নদীর দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে মেঘনা ঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে চর রমজান সোনা উল্লাহ মৌজায় মেঘনা নদী ও এর শাখা নদী ভরাট শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট শুরু হয়। এভাবে মেঘনা নদী ও এর শাখা নদীর মুখ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধিগ্রহণ করা জায়গা এবং খাস জমি ভরাট করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কমপক্ষে ৫০-৬০ জন লাঠি, রামদা, চায়নিজ কুড়াল নিয়ে মেঘনা নদীর তীরে ট্রলারে করে মহড়া দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া দিয়ে চর দখলের মতো নদী ও সরকারি সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, শাহজালাল মিয়া নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এই দখল উৎসবে মেতে উঠেছেন।

চর গোয়ালদী গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেই দিনদুপুরে এমন নদী দখলের সাহস তারা পায় কোথায়, বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না।’

দুধঘাটা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যেভাবে দখল শুরু হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে, দখলদাররা নদীর মুখ একেবারে বন্ধ করে দেবে। যেভাবে দখল শুরু করেছে, আগামী এক সপ্তাহ এভাবে চললে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণ করা জমি, খাস জমিসহ ৪০ বিঘা জমি দখল হয়ে যাবে। এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘আমি একটি কারখানার পক্ষে বালু ভরাট করছি। কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, নদীর তীরের জায়গাসহ সরকারি সম্পত্তি তারা লিজ নিয়েছে। কারখানার কর্মকর্তারা যেখানে বালু ভরাট করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা সেখানেই ভরাট করছি। ভরাট করার সময় নদী দখল হলে তা কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে।’

বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের অভিযানের মধ্যেই ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে নদী দখল করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ওই স্থানে অভিযান চালানো হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, নদী ও সরকারি জায়গা দখল করার অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পুলিশসহ পাঠিয়েছি। অভিযানের খবর পেয়ে দখলদাররা পালিয়ে গেছে। যেসব ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করছে, সেগুলো জব্দ করা হবে।’