চাল রপ্তানির বাজার খুঁজছে সরকার: খাদ্যমন্ত্রী

সাধন চন্দ্র মজুমদার
সাধন চন্দ্র মজুমদার
>

দেশের ধান-চালের দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে কৃষক। এ পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় ধানের উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি চাল রপ্তানির বাজার খুঁজছে সরকার। 

প্রথম আলো: কৃষককে বোরোর ন্যায্যমূল্য দিতে কী করছেন? তাঁদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার পরিমাণ বাড়াবেন?

খাদ্যমন্ত্রী: আসলে আমরা তো কৃষকের কাছ থেকে কখনোই খুব বেশি ধান কিনিনি। একবার ২০১৬ সালে যখন মিলমালিকেরা বললেন যে তাঁরা সরকারকে ধান–চাল দেবেন না, তখন আমরা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা শুরু করি। প্রায় পাঁচ লাখ টন কেনার পর আমাদের আর কেনার দরকার হয়নি। এবার দেড় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্তটি নেয় এ বিষয়ে সরকারের যে সংগ্রহ কমিটি আছে তারা। সেখানে ৯টি মন্ত্রণালয় জড়িত। আর আমাদের কমিটি যখন ওই সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দেশে ধান–চালের এই সংকট ছিল না। বরং ধানের দাম দুই টাকা বেড়েছিল বলে চালকলের মালিকদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক করতে হয়েছিল।

প্রথম আলো: কিন্তু ওই সময়ের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি তো এক নয়। চাল তো আপনারা কৃষকের কাছ থেকে নিচ্ছেন না। নিচ্ছেন চালকলের মালিকদের কাছ থেকে। এতে কৃষকের কি লাভ হবে?

খাদ্যমন্ত্রী: চালকলের মালিকদের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। ফলে তাঁদের কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি না থাকলে আমরা তা বাতিল করতে পারব না। তবে কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল না দেন, তাহলে আমরা ওই চুক্তি বাতিল করে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনব।

প্রথম আলো: চালকলের মালিকেরা তো বলছেন, তাঁদের কাছে আমনের বিপুল পরিমাণ চাল রয়ে গেছে। সেগুলো সরকারি গুদাম নিতে রাজি হলে তাঁরা হাতে নগদ টাকা পাবেন। তা দিয়ে বোরো ধান কেনা শুরু করবেন। এতে ধানের দাম বাড়বে। সরকারি সংগ্রহ দিয়ে দাম বাড়বে না।

খাদ্যমন্ত্রী: এটা সম্ভব নয়। কেননা আমরা বোরো ধান সংগ্রহের জন্য মূল্য ও পরিমাণ নির্ধারণ করেছি। আমন ধান ইতিমধ্যে পুরোনো হয়ে গেছে। আর সব মিলমালিক তো এক রকম নন। তাঁরা যে সরকারি গুদামে আমনের পুরোনো চাল দিয়ে যে টাকা পাবেন, তা দিয়ে বোরো ধান কিনবেন তার নিশ্চয়তা কী। সামনে জুন মাস, তাঁরা ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যে বসে থাকবেন না, তা আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব।

প্রথম আলো: জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ধান কেনা শুরু করেছেন। তাহলে খাদ্য বিভাগের সমস্যা কোথায়।

খাদ্যমন্ত্রী: কৃষক যে ধানগুলো এখন বাজারে আনছেন, তা ভেজা ধান। এতে আর্দ্রতা বেশি। ৪০ মণ ধান কেনার পর গুদামে রাখলে তা এক সপ্তাহের মধ্যে ওজন ১০ কেজি কমে যায়। আর এতে পোকা ও জীবাণুর আক্রমণ বেশি হয়। আমাদের যে খাদ্যগুদামের ক্ষমতা, সেখানে ধান ও চালের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ধানের পোকা চালের মধ্যে চলে যেতে পারে। তখন গুদামের সব খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

প্রথম আলো: তাহলে এখন উপায় কী?

খাদ্যমন্ত্রী: আমরা সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় ১০ লাখ টন ধান রাখার বিশেষ গুদাম নির্মাণ করছি। আর ফসলের উৎপাদন খরচ কমাতে আমরা বিঘাপ্রতি সেচের খরচ সুনির্দিষ্ট করে দিচ্ছি। আমরা দেখেছি, এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে ৭০০ টাকার বেশি খরচ হয় না। আর কৃষকের কাছ থেকে পাম্পের মালিক দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে নেন। আমরা এই খরচ ১ হাজার ২০০ টাকা বেঁধে দেব। আর বিদেশে চাল রপ্তানির জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাজার খুঁজতে বলেছেন। আমরা সেই চেষ্টা করছি।