ধীরগতিতে সংস্কার, চরম দুর্ভোগ

ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সংস্কারকাজ চলছে। মহাসড়কের শেরকোল এলাকায়।  প্রথম আলো
ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সংস্কারকাজ চলছে। মহাসড়কের শেরকোল এলাকায়। প্রথম আলো

নির্ধারিত সময়ে নাটোরের দুটি মহাসড়ক ও একটি আঞ্চলিক সড়কের সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। ফলে যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ঈদে গাড়ি ও ঘরমুখী যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় ভোগান্তি আরও তীব্রতর হচ্ছে। যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার উপায় খুঁজতে আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নাটোর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলনবিলের মধ্য দিয়ে নির্মিত নাটোর-বগুড়া ও বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক এবং নাটোর-দয়রামপুর আঞ্চলিক সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নাটোর অংশের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। জেলার সিংড়া উপজেলার শেরকোল সেতু থেকে বাঁশের ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের অধিকাংশ স্থান দেবে গেছে এবং খানাখন্দে ভরে উঠেছে।

যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে কয়েক মাস আগে নাটোর অংশ সংস্কারকাজ শুরু করে সওজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লোকবল ও যন্ত্রপাতি কম হওয়ায় সংস্কারকাজ চলছে ঢিমেতালে। যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতির চেয়ে অনেক কম গতিতে চলছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। বৃষ্টি হলে সংস্কারকাজের জন্য খুঁড়ে রাখা স্থান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ১২ মে নাটোরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সড়ক সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সভায় জেলা প্রশাসক ২০ রোজার মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শেরকোল থেকে সিংড়া সেতু পর্যন্ত অংশে সংস্কারকাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। মাত্র একটি এক্সকাভেটর ও একটি রোলার মেশিন দিয়ে গুটি কয়েক শ্রমিক সংস্কারকাজ করছেন। এ কাজের জন্য সড়কের একটি অংশ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। ফলে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে। সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি করা স্থানগুলোতে ও আগের খানাখন্দে পানিতে ভরা।

সিংড়া মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম বলেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল নিয়োগ না করে তড়িঘড়ি করে যেনতেনভাবে সংস্কারকাজ চলছে। সড়কের বেশ কিছু অংশে ভাঙা সড়কের ওপরই নতুন কার্পেটিং করা হচ্ছে। এতে কাজের মান খারাপ হচ্ছে। এভাবে কাজ করেও ঈদের আগে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ফলে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।

এদিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কের ২৬ কিলোমিটারজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। বিশেষ করে বনপাড়া বাইপাস মোড়, কাছিকাটা টোল প্লাজা চত্বর ও টোল প্লাজা থেকে সিরাজগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত অংশে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বনপাড়া ও টোল প্লাজা চত্বরে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ৩০ মের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু জেলা প্রশাসক এই সময়সীমা কমিয়ে ২০ রোজার মধ্যে কাজ শেষ করার তাগাদা দিয়েছিলেন। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টোল প্লাজার চারটি প্রবেশপথের মধ্যে তিনটি চালু হয়েছে। অন্যটির কাজ এখনো চলছে।

কাছিকাটা টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ মুঠোফোনে গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, সেখানে চারটি প্রবেশপথ রয়েছে। এর তিনটি নষ্ট হয়েছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত তিনটি পথ সচল করা সম্ভব হয়েছে। বাঁকি একটি বৃহস্পতিবার নাগাদ চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে বনপাড়া বাইপাস চত্বরেও সংস্কারকাজ শেষ হয়নি।

এ ছাড়া নাটোর পিটিআই মোড় থেকে দয়রামপুর আঞ্চলিক সড়কের বেশ কিছু অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

নাটোরের সওজ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ হোসেন তালুকদার বলেন, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্নœকরতে নাটোর-বগুড়া ও বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের সংস্কারকাজ চলছে। কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। ঈদের আগে সড়কের সংস্কারকাজ শেষ না হলেও এসব সড়ক মহাসড়ক যাতায়াতের উপযোগী করা হবে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, ঈদে ঘরমুখী মানুষ যাতে এবার সড়কপথে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ঈদের আগেই সংস্কারকাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার উপায় খুঁজতে মঙ্গলবার (আজ) জরুরি সভা আহ্বান করাহয়েছে। সভায় আলাপ–আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।