রংপুরের হতদরিদ্র প্রসূতিদের ভরসা

প্রচণ্ড রোদ আর গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিভিন্ন বয়সের নারী–পুরুষের পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরাও। এমনই এক শিশুকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিচ্ছেন মা। গতকাল দুপুরে রংপুর সদর উপজেলার জানকি ধাপেরহাট এলাকায়।  ছবি: মঈনুল ইসলাম
প্রচণ্ড রোদ আর গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিভিন্ন বয়সের নারী–পুরুষের পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরাও। এমনই এক শিশুকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিচ্ছেন মা। গতকাল দুপুরে রংপুর সদর উপজেলার জানকি ধাপেরহাট এলাকায়। ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরে হতদরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে উঠেছে ‘মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র’। এখানে গরিব রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এ কেন্দ্রে গত আট বছরে ৪ হাজার ২২৪ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।

রংপুর নগরের পুরাতন সদর হাসপাতাল চত্বরে তিনতলা ভবনে গড়ে উঠেছে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। এ ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগ। দোতলার ওয়ার্ডে ১০টি শয্যা রয়েছে। তিনতলায় রয়েছে অস্ত্রোপচারকক্ষ। প্রতিদিন প্রসূতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শতাধিক মা ও শিশু এ কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন।

এ কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা মুহ্তারিমা বেগম বলেন, বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখা দিলেই তখন অস্ত্রোপচার করা হয়। আর তা না হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসব করানোর চেষ্টা থাকে। এখানে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয়। এখানে একজন চিকিৎসক, একজন অবেদনবিদ, আটজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকাসহ ২০ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।

মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১৯ সালের মের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে ৬ হাজার ৬৯৬ জনের প্রসব হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৪ হাজার ২২৪ জনের। আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ২ হাজার ১৭২ জনের। এ ছাড়া একই সময়ে এখানে গর্ভকালীন সেবা নিয়েছেন ৪৯ হাজার ১৭৩ জন। প্রসব-পরবর্তী সেবা নিয়েছেন ১৯ হাজার ৯০১ জন নারী। শূন্য থেকে ১ বছরের চিকিৎসা নিয়েছে ১৩ হাজার ৯২২টি শিশু এবং ১ থেকে ৫ বছরের চিকিৎসা নিয়েছে ১৯ হাজার ৬৮৫টি শিশু।

এখানে প্রথমবার সন্তান হয়েছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর এলাকার আফসানা মিমির। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘এখানে বিনা পয়সায় সেবা পাইছি। কোনো অসুবিধা হয় নাই। ডাক্তারসহ সবাই ভালো।’

সম্প্রতি এ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১০ শয্যার এই কেন্দ্রে ১০ জন প্রসূতি ভর্তি রয়েছেন। আরও কয়েকজন প্রসূতি চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছেন।

রংপুর নগরের মডার্ন মোড় এলাকার সন্তানসম্ভবা আঁখি মণি এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে প্রথম চেকআপে এসেছি। এখানে এসে ভালো লাগছে। কোনো টাকাপয়সা খরচ নাই।’

কেন্দ্রটি পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এটি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর নাম ছিল ম্যাটিরনিটি, এরপর মাতৃমঙ্গল ও শিশুমঙ্গল নামে পরিচালিত হতো। ১৯৯০ সালে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র।

জানতে চাইলে রংপুর বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম সাইদুল ইসলাম বলেন, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, প্রসব এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় কেন্দ্রটি নিরলসভাবে কাজ করছে। ফলে এখানে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ

দিবসটি উপলক্ষে রংপুরে আজ মঙ্গলবার কর্মসূচি রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন জাকিরুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টায় সদর হাসপাতাল মিলনায়তনে আলোচনা সভা রয়েছে। এতে নিরাপদ মাতৃত্বের ওপর নানা বিষয় উপস্থাপন করা হবে।