গোধূলির সৌন্দর্যে লঞ্চের ছাদে ইফতার

সদরঘাটে একটি লঞ্চে ইফতারের আয়োজন। প্রতিদিন অনেকেই এভাবে ইফতার করেন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।  দীপু মালাকার
সদরঘাটে একটি লঞ্চে ইফতারের আয়োজন। প্রতিদিন অনেকেই এভাবে ইফতার করেন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। দীপু মালাকার

কোলাহলময় পরিবেশ থেকে একটু দূরে। মৃদুমন্দ বাতাসে খোলা আকাশের নিচে লঞ্চের ছাদে ইফতার আয়োজন নিয়ে বসেছেন একদল তরুণ। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। খানিকটা নির্মল পরিবেশে ইফতার করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসেন তাঁরা।

বুড়িগঙ্গা নদীতে কোলাহলমুক্ত ইফতারের জন্য যাত্রীদের পাশাপাশি শহরের দূর-দূরান্ত থেকে তরুণেরা ছুটে আসেন সদরঘাটে। বরিশাল ও চাঁদপুরগামী বিভিন্ন লঞ্চের ছাদে তাঁরা ইফতার করেন।

গত শনিবার বিকেলে টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বড় লঞ্চের ছাদ ও ডেকে ইফতার আয়োজন। ডেকে বসেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। আর ছাদে বসেন মূলত নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তরুণেরা।

শেষ সময়ে অনেকে ইফতারি সংগ্রহ করেন টার্মিনালে অবস্থিত বিভিন্ন ইফতারির দোকান থেকে। ছোলা, পেঁয়াজি, আলুর চপ, ডিম চপ, সবজি রোল, বেগুনি, জিলাপি, নুডলস, হালিম, বুন্দিয়া, ঘুগনি, খেজুর, দই চিড়া, চিংড়ি কাটেলট, পাকোড়া, মুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। বিশেষ পদের মধ্যে চিকেন তন্দুরি, চিকেন ফ্রাই, চিকেন স্পাইসি, চিকেন মাসালা, চিকেন ললিপপ, চিকেন হট ডগ, চিকেন হট উইং, দুধ পুডিং ও সেমাই পাওয়া যায়। এবার গ্রীষ্মে রমজান হওয়ায় ইফতারে যোগ হয়েছে মৌসুমি ফল আম, লিচু, আনারস, কাঁঠাল। লঞ্চগুলোর আশপাশে নদীতে নৌকায় করেও হকাররা বিক্রি করছেন হরেক রকমের ইফতারি।

যাত্রীরা বলেন, সাধারণত রাত আটটার পর থেকে বরিশালের বিভিন্ন রুটে লঞ্চ ছেড়ে যায়। কেবিনের বাইরে যেসব যাত্রী টিকিট কেনেন, তাঁরা একটু ভালো জায়গায় বসার আশায় বিকেল নাগাদই টার্মিনালে চলে আসেন। ইফতারসামগ্রী কিনে লঞ্চে পছন্দমতো জায়গা বেছে বসে পড়েন।

আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণেরা দল বেঁধে ইফতার করতে আসেন। তাঁরা টার্মিনালের বিভিন্ন দোকান থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে বড় লঞ্চগুলোর ছাদে চলে যান। মৃদু বাতাসে বসে আড্ডায় মেতে ইফতার করেন।

জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী এসেছেন লঞ্চের ছাদে ইফতার করার জন্য। তাঁদের মধ্যে কথা হয় রাশেদ হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ইফতারে একধরনের মজা আছে। এক পাশে ঢাকার উঁচু ভবন, অন্য পাশে খোলা পরিবেশ। নদীর ওপরে গোধূলির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ইফতার করা যায়। আরেক শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, ‘পুরান ঢাকায় চারপাশ এত বেশি আবদ্ধ যে দম ফেলার সুযোগ নেই। তাই বুড়িগঙ্গা নদী ওপর ইফতার করার জন্য এসেছি। ইফতারের আয়োজন যা–ই হোক। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়েছে। তাই এখানে প্রায়ই আসি বন্ধুরা মিলে। আড্ডা দেওয়া হয়। বাড়ির কথা কিছুটা সময় ভুলে থাকা যায়।’

তবে নানা পদের ইফতারি ও সাহ্‌রি পাওয়া গেলেও যাত্রীদের অভিযোগ খাবার মান নিয়ে। সুন্দরবন–১০ লঞ্চে পরিবার নিয়ে ওঠেন মারুফ রানা। তাঁরা বরিশালে যাবেন। টার্মিনাল থেকে ছোলা, মুড়ি, খেজুর ও ফলমূল কিনেছেন। লঞ্চের ভেতর বসে ইফতার করবেন। তিনি বলেন, খাবারগুলো অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে পরিবেশন করা হচ্ছিল। প্রতিটি খাবারেই মশা–মাছি বসে ছিল। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো উচিত।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) আলমগীর কবির বলেন, ‘যাত্রীদের সব সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এবং পুলিশ ও র‍্যাবের আলাদা মনিটরিং সেল সব সময় কাজ করে। লঞ্চের ক্যানটিন ব্যবস্থাপকদের বাড়তি দাম না নেওয়ার জন্য বলা হয়ছে। যাত্রীদের হয়রানি বন্ধসহ ঘাটের পরিবেশ ঠিক রাখতে টার্মিনালে লঞ্চের ভেতরে ৩০ মের পর কোনো হকার থাকবে না। থাকার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি।’