বাকিতে সেচ কীটনাশক সার বিক্রি করে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বোরো ধান আবাদ করে উপযুক্ত দাম না পেয়ে কৃষকেরা লোকসানে পড়ে দিশেহারা। আর ধান আবাদে হালচাষ, জমি সেচ, কীটনাশক ও সার বাকিতে বিক্রি করে টাকা তুলতে না পেরে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। টাকা আদায়ে হালখাতা করেও লাভ হচ্ছে না। টাকা পরিশোধ করতে আসছেন না কৃষকেরা। কেউ এলেও অর্ধেক পাওনা পরিশোধ করে ব্যবসায়ীর কাছে সময় নিচ্ছেন।

জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের বিদ্যুৎ–চালিত গভীর নলকূপের মালিক ছানোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর গভীর নলকূপের অধীনে বোরো ধান আবাদে ১৬০ বিঘা জমিতে তিনি বাকিতে পানি সেচ দিয়েছিলেন। কোনো কোনো কৃষক প্রথম দিকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে পানি সেচ নেন। আর অধিকাংশ কৃষকই বাকিতে পানি সেচ নিয়ে ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু তাঁরা এবার পানির দামে ধান বিক্রি করে লোকসানে পড়ায় বাকি টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।

ছানোয়ার হোসেন বলেন, বাড়ি বাড়ি ঘুরেও টাকা আদায় হচ্ছে না। নিজের টাকা খরচ করে ধান আবাদ করে দিয়ে তিনিই এখন বিপদে পড়েছেন। শ্যালো মেশিনের যন্ত্রাংশ বিক্রি, পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে হালচাষ, পানি সেচসহ তাঁর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপর বাকি রয়েছে।

একই উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের বিদ্যুৎ–চালিত গভীর নলকূপ ও পাওয়ার ট্রিলারের (হালচাষের যন্ত্র) মালিক বাবু হোসেন জানান, তাঁর নলকূপের অধীনে ২০০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদে পানি সেচ দিয়ে ছিলেন। শুধু পানি সেচ নয়, পাওয়ার ট্রিলারে বিঘাকে বিঘা জমিও চাষ করে দিয়েছেন বাকিতে। এ বছর সব মিলিয়ে কৃষকের কাছে তাঁর পাওনা রয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। ধান কাটা–মাড়াই প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু বাকি টাকা আদায় করতে পারছেন না। তিনি বলেন, গত বছর বোরো ধান আবাদ করে ধানের প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন কৃষকেরা। গতবার বাকি টাকা তুলতে কোনো সমস্যা হয়নি।

সদর উপজেলার জামালগঞ্জ চার মাথার কীটনাশক ব্যবসায়ী আবদুল গোফফার বলেন, বোরো ধান–কাটা মাড়াই শেষে গত বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকসহ সবার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ ছিল। ব্যবসায়ীরা বাকি টাকা আদায়ে দোকানের সামনে তোরণ বানিয়ে সকাল থেকে মাইক বাজিয়ে আনন্দ করে হালখাতা করতেন। লুচি, বুন্দিয়া, মিষ্টি আর বিরিয়ানি বানিয়ে দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কৃষকেরা খাওয়াদাওয়া করে খুশিমনে বাকি টাকা পরিশোধ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে যেতেন। কিন্তু এবার হালখাতা করেও টাকা ওঠানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘দাওয়াত পেয়েও টাকা দিতে না পারায় লজ্জায় অনেকে দোকানে আসছেন না। কারণ, ধানের দাম নেই। ২৪ মে হালখাতা করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১৭ হাজার টাকা আদায় করতে পেরেছি। হালখাতা করার খরচই ওঠেনি।’

ক্ষেতলাল উপজেলার আমিড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বাড়িতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ডিজেল বিক্রির দোকান করেছেন অনেক দিন হলো। প্রতিবছর বোরো মৌসুমের সময় বিক্রিও ভালো হয়। তিনি বাকিতে সার, কীটনাশক ও ডিজেল বিক্রি করেছেন প্রায় চার লাখ টাকার। হালখাতা করেও টাকা উঠবে কি না, এ নিয়ে তিনি শঙ্কিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গভীর নলকূপ ২ হাজার ৩৫টি এবং অগভীর নলকূপ ৮ হাজার ৪৮৭টি। ওই সব নলকূপের অধীনে জেলার পাঁচটি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৭২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

পাঁচবিবি উপজেলার খাসবাগুড়ী গ্রামের কৃষক মনির উদ্দীন বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। জমিতে পানি সেচ, কীটনাশক ও সার মিলিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে তাঁর বাকি রয়েছে ১৭ হাজার টাকা। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। এক মাস ওই ব্যবসায়ীর কাছে সময় চেয়ে নিয়েছেন। পুকুরের মাছ বিক্রি করে পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।