সিএনএসের ওপর রেল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ কম

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন সহযোগী প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের (সিএনএস) কার্যক্রমের ওপর খোদ রেল কর্তৃপক্ষেরই নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি আছে। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাও অনুসরণ করে না তারা। অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখে এমন প্রতিবেদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

গত সোমবার দ্বিতীয় দফায় অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমলাপুরে সিএনএসের সার্ভার স্টেশনে যায় দুদকের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন কথা জানায় দুদকের জনসংযোগ দপ্তর।

এর আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেও অভিযান চালিয়ে অনিয়মের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল দুদকের ওই প্রতিনিধিদল। দলের সদস্য ও দুদকের উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে রাত–দিন অপেক্ষা করে প্রত্যাশিত টিকিট না পাওয়ার পরও অবিক্রীত থাকা ট্রেনের ২৩ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত সোম ও মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৩১ মে ও ১ জুনের টিকিট। তবে অবিক্রীত টিকিট কাউন্টারে কিনতে এসেও ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন অনেকে।

২৬ মে ৪ জুনের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। কিন্তু পাঁচ দিনই গ্রাহকদের অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ ছিল কমলাপুর কাউন্টারে। অনলাইনে টিকিট না পেয়ে যাত্রীদের ভিড় ছিল সেখানে।

পাঁচ দিনের অনলাইনে টিকিট বিক্রির যে হিসাব দিয়েছে সিএনএস তাতে দেখা যায়, শুধু অনলাইনে অবিক্রীত টিকিটের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩টি। অথচ মানুষের ভোগান্তি কমাতেই এবার অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এত সংখ্যক টিকিট অবিক্রীত থাকার কারণ ও দুদকের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে কমলাপুরে সিএনএসের কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল আহসানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে এক খুদে বার্তার জবাবে জিয়াউল আহসান বলেন, ‘দুদক আমাদের বলেছে, সিএনএসের সবকিছু ঠিক আছে।’

এর আগে অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগের মুখে টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অনলাইনে টিকিট না পাওয়া আমাদের ব্যর্থতা। সিএনএস সমস্যার সমাধান করতে না পারলে তাদের সঙ্গে রেলের সম্পর্ক থাকবে না।’

অনলাইনে কেনা টিকিট নিতে মঙ্গলবার কমলাপুর কাউন্টারে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রাণেশ পাল। তিনি বলেন, ‘ভাগ্যক্রমে আমি টিকিট কিনতে পারলেও আমার এক বন্ধু অ্যাপে টিকিট কিনতে গেলে তার থেকে দুবার টিকিটের মূল্য কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু টিকিট দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য অভিযোগ জানানোর পর সে টাকা ফেরত পেয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় অ্যাপ আসলে কেমন।’

এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনলাইন ও কাউন্টারে অবিক্রীত থাকা টিকিট যাত্রার পাঁচ দিন আগে থেকে কাউন্টারে পাওয়া যাবে। আর অনলাইনে টিকিট কেনা যাবে যাত্রার দিন পর্যন্ত।

মঙ্গলবার কমলাপুরে অবিক্রীত টিকিট কিনতে এসেছিলেন একটি ইলেকট্রনিকস সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলাল খান। তিনি যাবেন দেওয়ানগঞ্জে। বলছিলেন, ‘সকালে অনলাইনে ৩১ মের টিকিট আছে দেখেছি। তাতে বলা ছিল এই টিকিট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এরপরই কাউন্টারে আসি। কিন্তু এখানে আসার পর বলছে টিকিট নেই। এটা দেখি ভোগান্তির ওপর আরেক ভোগান্তি।’