তানিয়াকে কেন হত্যা করা হয়?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর ভাটারায় তানিয়া বেগম (২৭) নামের এক নারীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এক যুবক। তাঁর নাম ফয়সাল (২৫)। এই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

২৫ মে রাজধানীর ভাটারার ছোলমাইদ বসুমতী এলাকার একটি বাসা থেকে তানিয়া বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তানিয়ার ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে ২৬ মে ভাটারা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তানিয়া বেগম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে সোমবার ঢাকার আদালতে পাঠায় পুলিশ। তানিয়াকে কেন হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয় সামনে রেখে করা হচ্ছে তদন্ত।

মামলার এজাহারে তানিয়ার ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ১০–১১ বছর আগে তাঁর বোনের সঙ্গে শাহ আলম নামের একজনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। ওই কন্যার বয়স এখন আট বছর। কিন্তু শাহ আলমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দুই বছর আগে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এই কারণে তানিয়ার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ কম ছিল। কয়েক মাস আগে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে জানান, একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ২৫ মে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ফোন করে জানায়, তাঁর বোনের লাশ পাওয়া গেছে ভাটারা এলাকার একটি বাসায়।

ভাটারা থানা-পুলিশ সোমবার ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ফয়সাল জানান, গত মার্চ মাসে তানিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। বিভিন্ন অজুহাতে তানিয়া তাঁর কাছে টাকাপয়সা চাইতেন। একপর্যায়ে তানিয়া তাঁকে ভালোবাসেন বলে জানান। তিনিও তানিয়ার প্রতি দুর্বল হন। একসময় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ভাটারা এলাকায় বাসা ভাড়া নেন তাঁরা। সেখানে তিনি (ফয়সাল) মাঝেমধ্যে যেতেন। চলতি মাসের প্রথম দিকে তানিয়া তাঁকে জানান, তিনি (তানিয়া) অন্তঃসত্ত্বা। এই সন্তান তিনি রাখতে চান না। গর্ভপাত করানোর জন্য তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা চান তানিয়া। সেই টাকাও ফয়সাল তাঁকে দেন।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২১ মে তানিয়া মুঠোফোনে ফয়সালকে বিভিন্ন ভয়েস রেকর্ড ও ছবি পাঠান। তাঁর কাছে না গেলে তিনি (তানিয়া) আত্মহত্যা করবে বলে জানান। পরদিন ২২ মে তানিয়া তাঁর কর্মস্থলে যান। কিন্তু ফয়সাল তাঁর (তানিয়া) সঙ্গে তখন দেখা করেননি। তানিয়া তখন যমুনা ফিউচার পার্কে চলে যান। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফয়সালের বারিধারা পার্ক রোডের বাসায় যান তানিয়া। ফয়সাল তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বারিধারার জাতিসংঘ রোডের দিকে চলে যান। তানিয়ার সঙ্গে ঝগড়া করেন ফয়সাল। একপর্যায়ে তানিয়াকে থাপ্পড় দেন ফয়সাল। পরে দুজন গাড়িতে করে অ্যাপোলো হাসপাতালের গেটে আসেন। তানিয়ার বাসায় আসেন ফয়সাল। বিয়ে করার জন্য ফয়সালকে চাপ দেন তানিয়া। বিয়ে না করলে তানিয়া আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেন।

কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে তানিয়া ফয়সালকে লক্ষ্য করে আয়না ছুড়ে মারেন। এতে ফয়সালের আঙুল ও ডান কাঁধ সামান্য কেটে যায়। ক্ষুব্ধ হয়ে তানিয়াকে ফের থাপ্পড় মারেন ফয়সাল। তখন রাত বাজে তিনটা। ফয়সাল ডান হাত দিয়ে তানিয়ার গলা চেপে ধরেন। বাঁ হাত দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তানিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তানিয়ার লাশ বিছানার চাদর ও তোশক দিয়ে মুড়ে ঘরে তালা মেরে বেরিয়ে যান তিনি। তানিয়ার মুঠোফোন ও বাসার চাবি ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে দেন ফয়সাল।

তানিয়ার ভাই মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোনের হত্যাকারী ফয়সালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।