এক বাজারেই দিনে ৫০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এ বছর লিচুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে লাখ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা হচ্ছে। এতে লিচুচাষি ও বাগানের মহাজনদের মুখে হাসি ফুটেছে।
বিজয়নগরের লিচু স্বাদে মিষ্টি ও রসাল। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বেশ কদর রয়েছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় এপ্রিলের মধ্যবর্তী সময়ে লিচুর ফলন হলেও বিজয়নগর উপজেলায় মে মাসেই লিচু বাজারে চলে আসে।
উপজেলার আউলিয়া বাজার, সিংগারবিল, হরষপুর, চান্দুরা, বিষ্ণুপুর, ছতরপুর, আজমপুর, চম্পকনগর বাজারে লিচু বিক্রি হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা পায়কারি দরে লিচু কিনে পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যান। তবে লিচু কেনার পর ব্যবসায়ীদের বাজারের ইজারা বাবদ ২০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিতে হয়।
এলাকাবাসী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন গভীর রাতে চাষি ও বাগানের মহাজনেরা লিচু নিয়ে বাজারে যান। রাত তিনটা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে একটি করে লিচুগাছ আছে। যাঁদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তাঁরা প্রত্যেকেই বাড়িতে লিচুগাছ লাগান।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটি দাউপুর এলাকায় পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে দেশি লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু হয়।
আনুমানিক ২০০৩ সালের আগে থেকে বিজয়নগর উপজেলায় লিচুর চাষ শুরু হয়। কম শ্রমে বেশি লাভ হয় বলে ধানি জমিগুলোকেও লিচুগাছ লাগিছেন অনেক চাষি। লিচুগাছে মুকুল ও গুটি এলেই প্রথম দফায় স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনের কাছে গাছ বিক্রি করা হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু ছোট আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় আকার ধারণ করলে চতুর্থ দফায় বিক্রি হয়। তবে সব চাষি এক মৌসুমের জন্য গাছের সব লিচু বিক্রি করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজারে দেখা গেছে, ভোর চারটায়ও বাজারে চাষিদের ভিড়। চাষিদের কেউ কেউ কাঁধে বোঝাই করে আবার কেউ কেউ মাথায় করে লিচু নিয়ে বাজারে আসেন।
উপজেলার ইছহাক মিয়া, রাসেল মিয়া, আলাউদ্দিন খাঁ, আবু বক্কর, সোলায়মান খন্দকারসহ উপজেলার কয়েকজন লিচুচাষি বলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই এ পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে রমজান মাস হওয়ায় দাম একটু কম। ঈদের পর বাজারদর ভালো হতে পারে বলে তাঁরা আশা করছেন। বাগানে যে পরিমাণ লিচু আছে তাতে আরও ২০-২৫ দিন বাজারে আসা যাবে।