গুলিস্তানে হামলায় কী বিস্ফোরক ছিল

গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনার এক মাস পার হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই হামলায় কী বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছিল, তা জানতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত বিস্ফোরকের আলামত পরীক্ষার জন্য এখনো কোনো পরীক্ষাগারেই পাঠানো হয়নি। এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলামত পরীক্ষা করতে আদালতের অনুমতির জন্য আবেদনও করা হয়েছে বিলম্বে। পুলিশের তদন্তেও কোনো অগ্রগতি নেই।

এরই মধ্যে গত রোববার রাতে মালিবাগে আবার পুলিশের ওপর একই ধরনের হামলা হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশের এক নারী সদস্যসহ তিনজন আহত হন। গুলিস্তানে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা হয় এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাত পৌনে আটটার দিকে। দুটি হামলার ধরন ও আলামত দেখে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, উভয় ঘটনায় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত।

দুটি ঘটনায়ই আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস দায় স্বীকার করেছে। সারা দেশে পুলিশকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যদিও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলাকে শুরুতে ককটেল নিক্ষেপ বলে ধারণা করেছিল পুলিশ। পরে সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, হামলায় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বা হাতে তৈরি বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। মালিবাগের হামলায়ও আইইডি ব্যবহার করা হয়।

মালিবাগের বিস্ফোরণ গুলিস্তানের চেয়েও শক্তিশালী ছিল বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। কিন্তু গুলিস্তানের হামলায় ব্যবহৃত আইইডিতে কী ধরনের বিস্ফোরক ছিল, এক মাসেও তা জানতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রহমত উল্লাহ চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গুলিস্তানের বিস্ফোরণস্থল থেকে পাওয়া আলামত রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এর ফল চলে আসার কথা।

কিন্তু সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা করার জন্য তাঁদের কাছে পাঠানো হয় না। এটি যায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরে। গুলিস্তান ও মালিবাগের ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল দুটি থেকে আলামত সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট থানার কাছে দিয়েছে। এরপর আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরে পাঠানোর কথা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে সেগুনবাগিচায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরে গেলে প্রধান পরিদর্শক মো. সামসুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, গুলিস্তানে বিস্ফোরণের ঘটনার কোনো আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁদের কাছে গতকাল পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। মালিবাগের বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, এক মাস আগের ঘটনার আলামতই এখনো আসেনি। দুদিন আগের ঘটনার আলামত তো আসার প্রশ্নই ওঠে না।

গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলা মামলার তদন্তভার ২৪ মে সিটিটিসিকে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো মামলার নথিপত্র তাদের হাতে পৌঁছায়নি। এর আগ পর্যন্ত এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোলাইমান গাজী। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সোলাইমান গাজী গতকাল প্রথম আলোকে বললেন, ‘বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।’ কী ধরনের বিস্ফোরক ছিল, তা জানা গেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিস্ফোরক কী ছিল, তা তারা এখনো জানতে পারেননি। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত পরীক্ষার জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরে পাঠাতে অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত একটি ক্ষমতাপত্র দেবেন, এরপরই সেটা পাঠানো হবে।

এক মাসেও কি আদালত থেকে অনুমতি পাওয়া যায়নি—এ প্রশ্নের জবাবে মো. সোলাইমান গাজী জানালেন, আদালতে আবেদন করতেই দেরি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বললেন, ‘ঘটনার আরও কয়েকটি দিক; যেমন ঘটনার সময় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণ আমরা খুঁজছিলাম, এসব কারণে দেরি হয়েছে।’

এদিকে রোববার রাতে মালিবাগে হামলার ঘটনায় করা মামলাটিও সিটিটিসিতে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই মো. সৈয়দ আলী। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি পেলেই সিটিটিসিতে স্থানান্তর করা হবে।’ তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।