তক্ষক পাচার ঘিরে বাড়ছে অপরাধ

গেকোনিডি গোত্রের গিরগিটি প্রজাতির তক্ষক।  তক্ষকের ছবিটি উত্তর রেংক্যার্যা এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা।  প্রথম আলো
গেকোনিডি গোত্রের গিরগিটি প্রজাতির তক্ষক। তক্ষকের ছবিটি উত্তর রেংক্যার্যা এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা। প্রথম আলো

বিপন্ন প্রাণী তক্ষক ধরে হুজুগের বশে পাচার করার ঘটনা বেড়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়। আর একে কেন্দ্র করে বাড়ছে অপরাধ। তক্ষক পাচারের বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। আবার তক্ষক পাচারও ব্যবসার অন্তরালে জাল টাকা ও মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি তক্ষক পাচারের পর এক লাখ টাকার জাল নোটসহ দুজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ ও বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তক্ষক নিয়ে ব্যবসা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তক্ষক ব্যবসা নিয়ে উপজেলায় একটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ের সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। দৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে এক একটি তক্ষকের দাম নির্ধারিত হয় বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। তক্ষক কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসেন। অনেক সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়েও নেওয়া হয়। তবে ঝামেলার ভয়ে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের কাছে যেতে চান না।

তক্ষক ব্যবসার বিরোধে ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল খুন হন উপজেলার মধ্য বেতছড়ির গোরস্থান পাড়ার যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনকে (৩২)। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে তক্ষক ব্যবসার বিরোধে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে স্বীকারোক্তি দেন। দীঘিনালা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাবারক হোসেন দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রেও তক্ষক ব্যবসার বিরোধে খুনের ঘটনাটি ঘটে বলে উল্লেখ্য করা হয়। ১৭ মে দুপুরে বাস টার্মিনাল এলাকায় তক্ষক ব্যবসার টাকা লেনদেন করার সময় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকার জাল নোটসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সেনারগাঁওয়ের শাহাদাত হোসেন (৩৯) ও মধ্য বেতছড়ি গোরস্থান পাড়া এলাকার সাইদুল ইসলামকে (২৭) গ্রেপ্তার করে। সবশেষ ২৫ মে দুপুরে উপজেলার বেলছড়ি এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনটি তক্ষকসহ মো. জাফর (৩৮) মো. ইব্রাহিম (২৪) ও মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (২৬) গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।

দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘তক্ষক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জাল টাকার সিন্ডিকেট, মাদকসহ অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তক্ষকের বিরোধ নিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। আমরা তক্ষক পাচারের সিন্ডিকেট ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। তক্ষক পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাঁদের আইনের আওতায় আনার স্বার্থে নাম প্রকাশ করছি না। তক্ষক পাচারকারীদের মাধ্যমেই জাল টাকা ও মাদকের বিস্তার ঘটছে। আমরা তক্ষক, জাল টাকা ও মাদক এসবে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’