উত্তরায় হাতের নাগালেই মিলছে ময়লার ঝুড়ি

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে সড়কবাতির খুঁটির সঙ্গে লাগানো হয়েছে ময়লা ফেলার ঝুড়ি।  প্রথম আলো।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে সড়কবাতির খুঁটির সঙ্গে লাগানো হয়েছে ময়লা ফেলার ঝুড়ি। প্রথম আলো।

রাস্তার এক পাশে সড়কবাতির খুঁটিতে বসানো হয়েছে ময়লা ফেলার ছোট ছোট ঝুড়ি (ওয়েস্টবিন)। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে এই উদ্যোগ। এতে বাসিন্দাদের সাড়াও মিলেছে বেশ। চলতি পথে হাতের নাগালেই ঝুড়ি থাকায় হাতের পলিথিন-প্লাস্টিকসহ অন্যান্য আবর্জন বাসিন্দারা ফেলছেন ওই ঝুড়িতে।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে গত শুক্রবার ময়লা ফেলার এমন ঝুড়ি বসানো হয়েছে। সেক্টরের ১ নম্বর সড়কে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ৮০টি সড়কবাতির খুঁটির সঙ্গে এই ঝুড়ি বসিয়েছেন কল্যাণ সমিতির কর্মকর্তারা। এগুলো বসাতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে সমিতির কর্মকর্তারা জানান। পর্যায়ক্রমে সেক্টরের অন্য সড়কগুলোতেও এমন আরও ১৭০টি ঝুড়ি বসানো হবে।

সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফ সান্তু জানান, সেক্টরের পরিবেশকে বাসযোগ্য করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু প্রায় সময়ই পথচারীরা হাতের ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে, রাস্তায়, নালায় ফেলে পরিবেশ নোংরা করে। এসব আবর্জনা নালায় জমে থাকায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হয়।

শরীফ সান্তু বলেন, ‘অনেক সময় ময়লা ফেলার কোনো জায়গা না থাকাতেও লোকজন এমন কাজ করেন। মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন করতেই আমরা ঝুড়ি বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। যাতে হাতের ময়লা হাতের কাছেই ফেলার জায়গা পান সেক্টরবাসী।’

গত শুক্রবার সড়কটির বিভিন্ন খুঁটিতে লাগানো হয়েছে এসব বিন। সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের প্রতিটি সড়কবাতির খুঁটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এক একটি আর্জনার ঝুড়ি। প্রায় প্রতিটি ঝুড়িতেই আবর্জনা দেখা গেছে। এর বেশির ভাগই বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক, কোমল পানীয়র বোতল, পলিথিন প্রভৃতি। রাস্তার পাশে থাকা দোকানসংলগ্ন ঝুড়িতে জমে থাকা ময়লার পরিমাণ ছিল একটু বেশি। চিপস, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পরপর কয়েকজনকে ওই পণ্যের মোড়ক বিনে ফেলে দিতে দেখা গেছে। সড়কের নালাগুলোতে প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় আবর্জনা বেশি দেখা যায়নি।

সেক্টর কল্যাণ সমিতি সদস্যরা বলেন, ময়লার ঝুড়িগুলো লোহার নেটের তৈরি এবং খোলামেলা। তাই গন্ধ জমে থাকবে না। পচনশীল কোনো জিনিস জমে পচারও কোনো সুযোগ নেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই ময়লা প্রতিদিন রাতে পরিষ্কার করবেন বলেও জানানো হয়।

গত শুক্রবার এই ময়লার ঝুড়ি বসানো হয়েছে। এটা বসানোর পর সেক্টরবাসীর ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইতিবাচক পরিবর্তনও আসছে। লোকজন এখন সবাই বিনের ভেতরই আবর্জনা ফেলছে।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা হেমায়েত হোসেন বলেন, ঝুড়িতে যে আবর্জনা দেখতে পাচ্ছেন, এগুলো মানুষ রাস্তায় নয়তো নালায় ফেলে দিত। তখন নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যা হতো। কিন্তু হাতের কাছে ময়লা ফেলার পাত্র থাকায় ময়লাগুলো ওই পাত্রেই জমা হচ্ছে। জেরিন খান বলেন, ময়লার ঝুড়ি থাকায় সুবিধা হয়েছে। মানুষ হাতের কাছেই ময়লা ফেলার পাত্র পাচ্ছে। একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে অন্য কোথাও বিন না পেলেও মানুষ যত্রতত্র ময়লা ছুড়ে ফেলবে না।

ওয়ার্ডটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। সেখানকার কাউন্সিলর শরিফুর রহমান বলেন, ‘আমি তাদের ময়লার ঝুড়ি স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলাম। কল্যাণ সমিতির এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আমি আশা করি এমন ভালো উদ্যোগ অন্যান্য সেক্টরের বাসিন্দাদেরও অনুপ্রাণিত করবে। কাউন্সিলর হিসেবে তাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমি সহযোগিতা করব।’

সেক্টরের বাসিন্দাদের কাছে কল্যাণ সমিতির আহ্বান, ১২ নম্বর সেক্টরের সব বাসিন্দা ময়লার ঝুড়ি যেন যথাযথ ব্যবহার করেন এবং সেক্টরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন। তাহলে ১২ নম্বর সেক্টরটি অন্য সব কয়টি সেক্টরের মধ্যে আদর্শ সেক্টর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। শিগগিরই ওই সেক্টরের অন্যান্য সড়কেও ময়লার ঝুড়ি বসানো হবে বলেও কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়।