গাজীপুরে আগুনের ঝুঁকিতে ২৪৩ মার্কেট ও ভবন

গাজীপুরে ফায়ার সার্ভিসের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিঝুঁকিতে আছে ২৪৩টি মার্কেট ও হাসপাতাল ভবন। আর পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার ২০ শতাংশ কারখানা অগ্নিঝুঁকিতে আছে। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তদন্ত করে এসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে মানুষ।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জরুরি বহির্গমনের পথ বের করার পরামর্শ দিয়েছেন। গাজীপুর শহরে এমন পাঁচটি ভবনে ‘অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা নোটিশও ঝুলিয়েছেন তাঁরা।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের শতাধিক পোশাক কারখানা ও বহুতল ভবনে পর্যাপ্ত অগ্নিপ্রতিরোধব্যবস্থা নেই। কারখানা ও ভবনগুলোতে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির পাশাপাশি লাখো মানুষ, বিশেষ করে শ্রমিকেরা রয়েছেন মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে। গাজীপুরে পোশাকসহ প্রায় দেড় হাজার কারখানার মধ্যে দুই শতাধিক কারখানা অগ্নিঝুঁকিতে আছে। ঢাকার কয়েকটি ভবনে আগুন লাগার পর মাঠে নামে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস বিভাগ। ভোগড়া এলাকার ওয়াসিফ নিট কম্পোজিট লিমিটেড, হাবিবুল্লাহ ভবনের মে ফ্যাশন লিমিটেড ও পেয়ারা বাগান এলাকার সাসটেক্স বিডি লিমিটেড কারখানা এবং চান্দনার শাপলা ম্যানশন ও রহমান শপিং মলে ‘অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও সেসব প্রতিষ্ঠান তেমন সাড়া দেয়নি। বরং অধিকাংশ ব্যানারই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। যদিও মালিক পক্ষ বলছে, তারা অগ্নিনিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কিছু ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আবার নানা ধরনের জটিলতায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস।

পোশাক কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, পানির পাম্প, গ্যাস মাস্কসহ ডিটেক্টর, পৃথক বহির্গমন পথ, ভবনের ওপর ও নিচে পানি সংরক্ষণব্যবস্থা, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ (অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অনেক প্রতিষ্ঠানেই রাখা হয়। কোথাও কোথাও লোকদেখানো দু-একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার ঝোলানো থাকলেও এসবের কোনো কোনোটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এই অবস্থায় আগুনের ভীতি নিয়েও জীবনের তাগিদে নিরাপত্তাহীনতায় কাজ করছেন তাঁরা।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবন নির্মাণের পর ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিঝুঁকি নেই এমন ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অনেক বহুতল ভবনে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেই। আবার অনেকে ছাড়পত্র নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নেয়নি। ভবন নির্মাণের সময় অনেক মালিক ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র গ্রহণ করলেও অগ্নিপ্রতিরোধ, নির্বাপণ ও নিরাপত্তায় ভবনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখেননি।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস বিভাগের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান জানান, অনেক ভবনের মালিক আইন মেনে ভবন নির্মাণ করেননি। বারবার চিঠি দিয়েও তাঁদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই জেলা ও মহানগরের প্রায় ৮০ শতাংশ শিল্পকারখানা অগ্নিঝুঁকিমুক্ত হলেও বাকি ২০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা গ্রহণে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কথা শুনছেন না ভবনের মালিকেরা।