দুই কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে পণ্যগুদাম

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের বৃহত্তর বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যগুদাম। বন্দরের অধিকাংশ গুদাম ও আঙিনায় নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকলেও তা অকেজো। আবার বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে আমদানি করা দাহ্য পণ্যের সঙ্গে রাখা হচ্ছে সাধারণ পণ্য। পণ্য রাখায় কোনো শৃঙ্খলা না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও বেশি।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস প্রথম আলোকে বলেন, এখন গরমের সময়। যেকোনো সময় আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তবে তাঁরা সতর্ক রয়েছেন। যেসব গুদামে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে, সেগুলো দ্রুত ত্রুটিমুক্ত করা হবে।

বন্দর-সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছরে বন্দরের গুদামে অন্তত সাতবার আগুন লেগেছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় প্রতিবারই আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফায়ার সার্ভিস ডেকে আগুন নেভাতে হয়। আগুনে পুড়ে যায় আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্য। কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণ পান না আমদানিকারকেরা।

বেনাপোল বন্দরে ৩৮টি গুদাম ও আঙিনা রয়েছে। এর ধারণক্ষমতা ৪৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন। আর রাখা হচ্ছে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ পণ্য। গাদাগাদি করে পণ্য রাখার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও প্রকট।

সম্প্রতি বন্দরের ৩২ নম্বর গুদামে গিয়ে দেখা গেছে, ৪০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার এ গুদামে অতি দাহ্য ও সাধারণ পণ্য একই জায়গায় পাশাপাশি রাখা হয়েছে। ড্রামভর্তি ডাইস (রং), বস্তা ভরা রেইজিং পাউডার, ছাপাখানার কালিসহ অন্যান্য পণ্য রাখা আছে। গুদামের এক কোনায় পণ্যের নিচে পড়ে আছে কয়েকটি অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম (ফায়ার এক্সটিংগুইশার)। দেখলেই বোঝা যায়, এর সবগুলোই অকেজো। পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

জানতে চাইলে গুদামের ইনচার্জ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘ওগুলো দেখভাল করার জন্য বন্দরে আলাদা কর্মী রয়েছেন। আমি শুধু বলতে পারি, এখানে ২০ কেজি ওজনের ১০টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে। এগুলো চালু আছে কি না, তা আমি জানি না।’

পাশের ৩৪ নম্বর গুদামে গিয়ে দেখা গেল, মোটরগাড়ির ইঞ্জিনের তেল (লুব্রিকেন্ট), রাসায়নিক, ডাইস ও ছাপাখানার কালিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। এখানেও পণ্য রাখার কোনো শৃঙ্খলা নেই। আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলোও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ২৯ নম্বর গুদামে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর বন্দরের ২৩ নম্বর গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে গুদামে রাখা তৈরি পোশাকসহ আমদানি করা কাপড়, রং, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, শিল্পকারখানার যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, ফাইবার, মশা তাড়ানো স্প্রে, তুলা, কাগজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পুড়ে যায়। যার দাম কয়েক কোটি টাকা। তখন এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়। তবে আড়াই বছরেও ব্যবসায়ীরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আমদানি-রপ্তানি উপকমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বন্দরের প্রতিটি গুদাম ও আঙিনা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বন্দরের পরিচালক ও কর্তৃপক্ষকে বহুবার বলেছি। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি।’ মতিয়ার জানান, গত ১০ বছরে বন্দরে অন্তত সাতবার আগুন লেগেছে। এতে শত শত কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। বন্দরের কোনো তদারকি নেই।

বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা নেই। গুদামে অতি দাহ্য পণ্যের সঙ্গে সাধারণ পণ্য রাখা হচ্ছে। এতে গুদামগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা বাড়াতে হবে। আগুন নেভানোর জন্য বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।