হাতের কাছে চিকিৎসা নেই

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। কিন্তু এসব কেন্দ্রে সেবা দেওয়ার জন্য গত ১০ বছরেও নির্মাণ করা হয়নি কোনো স্থাপনা বা অবকাঠামো। এ কারণে বসার জায়গা না পেয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা কেউ প্রেষণে অন্য হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন, কেউ বদলি নিয়ে চলে গেছেন। এতে ইউনিয়নগুলোর মানুষ হাতের নাগালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পারবিষ্ণুপুর গ্রামের মজিদা খাতুন বলেন, ‘হামার ইউনিয়ানোত কোনো হাসপাতাল হয় নাই। অসুখ–বিসুখ হইলে হামাক ডাক্তার দেকপার জন্যে ১০ মাইল দূরোত বদরগঞ্জের হাসপাতালোত যাবার নাগে। ইউনিয়ানোত কোনোটে ডাক্তার বসলে হামার জন্যে খুব ভালো হয়। সেই ভাগ্য কি হামার হইবে।’

এই আক্ষেপ শুধু মজিদা খাতুনেরই নয়, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর, মধুপুর, দামোদরপুর, বিষ্ণুপুর, লোহানীপাড়া ও রামনাথপুর ইউনিয়নে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে গোপীনাথপুর, মধুপুর, দামোদরপুর, বিষ্ণুপুর, লোহানীপাড়া ও রামনাথপুর ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল না। সরকার ২০০৯ সালে এসব ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়। ওই সময়ই প্রতিটি কেন্দ্রের একজন সহকারী সার্জন, একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টি করা হয়। ২০১০ সালে সরকার ওই ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন সহকারী সার্জন ও একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। কিন্তু ভবন বা ঘর নির্মাণ না করায় এসব কেন্দ্রে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়নি।

দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, দৃশ্যমান কোনো অবকাঠামো না থাকায় তৃণমূলের সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে সরকার ইউনিয়নগুলোয় ১০ বছর আগে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র দিয়েছে, সেটা কেউই জানেন না। তবে সরকারের এটা ভালো উদ্যোগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ছয় ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বসার জায়গা না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে কেউ বদলি নিয়ে চলে গেছেন। কেউ প্রেষণে অন্য হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন জিয়াউল হক তিন বছর ধরে প্রেষণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করলেও বেতন তুলছেন বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। রামনাথপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন আবদুল্লাহ আল মাশরাফী ২০১০ সালের ৬ মে থেকে বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন, দামোদরপুর ইউনিয়নের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা গুলফাম-ই-জান্নাত, মধুপুর ইউনিয়নের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা মোনালিসা, রামনাথপুর ইউনিয়নের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা নাজির হোসেন, লোহানীপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম কাগজে–কলমে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই বদলি হয়েছেন।

লোহানীপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান ডলু শাহ্ বলেন, বদরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে আমার ইউনিয়ন ১৫-১৮ কিলোমিটার দূরে। ইউনিয়নের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে বদরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে যেতে হয়। দূরত্ব বেশি হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার আগে অনেক সময় রোগী পথে মারাও যায়।

এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র দেওয়া সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য আজও সরকার কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করে দেয়নি। ফলে নিয়োগ দেওয়া হলেও চিকিৎসকেরা ইউনিয়নগুলোতে গিয়ে সেবা দিতে পারছেন না।