সেখানে বিদ্যুৎ গেলে ২-৭ দিন পর আসে!

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ঝড় বা বৃষ্টি শুরু হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। একবার গেলে দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ইনসুলেটর পুরোনো হওয়ায় কয়েক যুগ ধরে এ সমস্যা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২৮ দিনে এ উপজেলায় ১৩ দিন বিদ্যুৎ ছিল না। এ পরিস্থিতিতে এখানকার মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে। আর তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়, আসে তিন দিন পর। এরপর শেষ সপ্তাহে দুই দিন বিদ্যুৎ ছিল না। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার বিদ্যুৎ ছিল না। মাঝখানে রোববার বিদ্যুৎ আসে। আবার সোমবার রাতে বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুৎ চলে যায়, আসে বুধবার রাতে। আবার বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে শনিবার বিকেলে বিদ্যুৎ আসে। পরে রোববার রাতে বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আসে সোমবার সন্ধ্যায়। চলতি মাসে মোট আট দিন বিদ্যুৎ ছিল না। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দিনে বিদ্যুৎ আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকে। আর রাত হলেই বিদ্যুৎ থাকে না। এ অবস্থায় ১৬ হাজার গ্রাহক ও প্রায় ২ হাজার ৪০০ সেচপাম্পের মালিক চরম দুর্ভোগে পড়েন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিপি) পাটগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে পাটগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারে ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের তার টানা হয়। বর্তমানে এ লাইনের ইনসুলেটরগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই এগুলো পুড়ে যায়। এগুলো খুঁজে বের করে মেরামত করতে সময় লেগে যায়। এতে কখনো কখনো পাঁচ-ছয় দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পিডিবির এক কর্মকর্তা এই কথা স্বীকার করে বলেন, ৩৩ হাজার কেভি সঞ্চালন লাইনের দূরত্বই এর জন্য দায়ী। এত লো ভোল্টেজও দূরত্বের কারণে হচ্ছে। লো ভোল্টেজের সমস্যা দূর করতে মাঝেমধ্যে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। দেশের কোথাও এত দূরত্বের গ্রিড লাইন নেই। পাঁচ উপজেলার মধ্যবর্তী উপজেলায় একটি গ্রিড সাবস্টেশন বসানো হলে সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার মধ্যে ২০ মে পৌরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ভাড়ায় চালিত জেনারেটর দোকানের সামনে বসিয়ে বেকারি সামগ্রী ও ফ্রিজে রাখা মালামাল রক্ষার চেষ্টা করছেন। অনেকে তাঁদের মুঠোফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য ভিড় করছেন।

ওই বেকারি ব্যবসায়ী মুন্নু জানান, তিনি ফ্রিজের আইসক্রিম রক্ষায় জেনারেটর বসিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। এমনিতেই ঘন ঘন লোডশেডিং হয়। আবার যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে, তা যাওয়া-আসার মধ্যে থাকে। লো-ভোল্টেজে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুতের এই অবস্থার কথা স্বীকার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল করিম। তিনি বলেন, বিদ্যুতের যে হাল, তাতে এলাকার কি উন্নয়ন হবে! এভাবে চলতে থাকলে এলাকায় কেউ কলকারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসবে না। এলাকা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে।