ধর্ষণের বিচার না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামে জোসনা আক্তার (১৬) নামের এক কিশোরী গত শনিবার রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের বিচারের নামে সালিসে তাকে উল্টো ভর্ৎসনা করেছিলেন গ্রামের মাতব্বরেরা। এই অপমান সইতে না পেরে জোসনা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
এ ঘটনায় ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে প্রতিবেশী বাদল মিয়ার বিরুদ্ধে গতকাল রোববার মামলা করেছেন জোসনার ভাই হাবিবুর রহমান। পুলিশ গ্রামের দুই মাতব্বরকে আটক করেছে।
জোসনার পরিবারের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ির পাশে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় জোসনা। এর কিছুক্ষণ পর গরুর জন্য ঘাস কাটতে সেখানে যান বাদল। এ সময় একা পেয়ে তিনি মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর বাড়িতে ফিরে বিষয়টি জোসনা তাঁর পরিবারের লোকজনকে জানায়। এ ঘটনায় পরের দিন শুক্রবার গ্রামের মাতব্বর সিরাজুল ইসলাম ওরফে পাখি মিয়া এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য পরান আলীর কাছে বিচার চায় জোসনার পরিবার। শনিবার রাত ১১টার দিকে সিরাজুলের বাড়িতে সালিস বসে। সালিসে অভিযুক্ত বাদল হাজির না হলেও তাঁর ভাই আবদুল আজিজ এবং জোসনা ও তার ভাই হাবিবুর রহমান ছাড়াও দুই পক্ষেরই লোকজন উপস্থিত ছিল। সালিসে বাদলকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ রায় মেনে না নেওয়ায় জোসনা ও তার পরিবারের সদস্যদের গালিগালাজ করেন মাতব্বরেরা।
গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘরের ভেতরে জোসনার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় বাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে দুপুরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। জোসনার ভাই হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সালিসকারীরা তাঁর বোনের ধর্ষণকারীর কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে ঘটনাটি থামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। মাতব্বরেরা সালিস বৈঠকের নামে তাঁদের সঙ্গে অবিচার করেছেন। বিচার না পেয়ে ক্ষোভে ও লজ্জায় তাঁর বোন আত্মহত্যা করেছে।
সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান জানান, মেয়েটির ভাই হাবিবুর রহমান মামলা করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রামের মাতব্বর সিরাজুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য পরান আলীকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল দুপুরে বাদলের বাড়িতে গিয়ে কোনো পুরুষ মানুষকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোন নাম্বার চাইলে তাঁর এক ভাবি জানান, তাঁদের বাড়িতে কেউ মুঠোফোন ব্যবহার করে না।