যত্রতত্র পার্ক করলে এবার 'ভিডিও মামলা'র ফাঁদ

অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে ‘ভিডিও মামলা’ দিচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। গতকাল বিকেলে নগরের আম্বরখানা এলাকায়।  প্রথম আলো
অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে ‘ভিডিও মামলা’ দিচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। গতকাল বিকেলে নগরের আম্বরখানা এলাকায়। প্রথম আলো

সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হকার উচ্ছেদ, পথচারীদের ফুটপাত ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, অননুমোদিত পার্কিং অপসারণের পাশাপাশি যত্রতত্র পার্কিং রুখতে ‘ভিডিও মামলা’ চালু করেছে সিলেট নগর পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ফলে নগরে যত্রতত্র পার্ক করে রাখা যানবাহনের চালক ও মালিকেরা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন।

গতকাল বিকেল চারটায় সিলেট নগরের আম্বরখানা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, হ্যান্ডমাইক হাতে দাঁড়িয়ে নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ। মাইকে তিনি চালকদের উদ্দেশে বলছেন, ‘আপনারা যত্রতত্রভাবে যানবাহন পার্ক করবেন না। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাবেন না, নিরাপত্তাহীনভাবে ওভারটেকিং করবেন না, সাবধানে চালাব গাড়ি নিরাপদে ফিরব বাড়ি, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি।’

অন্যদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আরেক পুলিশ সদস্য ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ভাইয়েরা, আপনারা যত্রতত্রভাবে গাড়ি রাখবেন না। আপনাদের জন্য সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না।’ সেখানে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) নিকুলিন চাকমাসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মহানগর ট্রাফিক বিভাগের ভিডিও মামলায় শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে অবৈধভাবে পার্ক করা যানবাহনের চালক ও মালিকদের। দিন-রাত সমানতালে অবৈধ পার্ক করা যানবাহন ও ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে ট্রাফিক বিভাগ।

নগর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরের যানজটের মূল কারণ যত্রতত্রভাবে অবৈধ পার্কিং। অনেকেই সড়কে যত্রতত্র মূল সড়ক ও ফুটপাতে মোটরসাইকেল ও যানবাহন রেখে চলে যান। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক বিভাগ বিষয়টি সমাধানে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। যত্রতত্র পার্ক করা যানবাহনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। পরে সে যানবাহন কিংবা মোটরাসাইকেলের নম্বর অনুযায়ী বিআরটিএতে গিয়ে মালিকের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। পরে যানবাহনের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে আসতে বলা হয়। ওই যানবাহনের মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধ পার্কিংয়ের মামলা দায়ের করা হয়। ভিডিও ধারণের মাধ্যমে তথ্য–প্রমাণ সংগ্রহ করে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াটিকে ট্রাফিক বিভাগে ‘ভিডিও মামলা’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ট্রাফিক বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রমে উচ্ছেদ করা হচ্ছে ফুটপাতে অবৈধ দখল করে ব্যবসা পরিচালনাকারীদের। সড়কে রাখা হকারদের বিভিন্ন সামগ্রীও ট্রাকে করে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

ট্রাফিক বিভাগ পথচারীদের ফুটপাত ধরে চলাচল করতে এবং সড়ক পারাপারে সাদা-কালো ডোরা কাটা চিহ্ন জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছেন।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, যত্রতত্র পার্ক করা যানবাহন ও মোটরসাইকেলের মালিক পাওয়া না গেলে ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। পরে সেটির মালিকের নাম–পরিচয় শনাক্ত করে মামলায় রূপান্তর করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে যানবাহন ও মোটরসাইকেল চালক এবং আরোহীদের সচেতন করা। বিপরীত দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা। মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের হেলমেট পরিধান। এ ছাড়া ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করা হকারদের এবং অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সেদিকটি বর্তমানে লক্ষ রাখা হচ্ছে।