বোরো ধানের ভালো ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

কৃষকেরা বোরো ধান মাড়াই করছেন। সম্প্রতি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার পারারবন্দ গ্রামে।
কৃষকেরা বোরো ধান মাড়াই করছেন। সম্প্রতি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার পারারবন্দ গ্রামে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি গ্রামের কৃষকেরা চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। ১০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা নিজেরা পরিশ্রম করে ধানের আবাদ করেন। এ কারণে তাঁদের খরচ কম হয়। এতে তাঁদের লাভ বেশি হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাউদকান্দি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলায় চলতি বছর ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ও ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নে প্লাবন ভূমির মাছ চাষের প্রকল্পগুলোতে কম খরচে ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশি হয়েছে।

উপজেলার সিংগুলা গ্রামের কৃষক ওবায়দুল হক বলেন, ১৯৯৫ সালের আগে এই এলাকার ফসলের মাঠগুলোতে বাঙ্গি, তরমুজ, ক্ষীরা, শসা, আমন ধান, পাট, গম, তিল, ঢ্যাঁড়স, টমেটো, পুঁইশাক ও মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করতেন। পরবর্তী সময়ে কৃষকেরা বছরের খোরাক নিশ্চিত করতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বোরো ধানের আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে পরিবারের সদস্যরা অন্য কাজের পাশাপাশি ধান চাষে সহযোগিতা করলে নিশ্চিত লাভবান হওয়া যায়।

উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মো. আলম বলেন, তিনি উপজেলার আপুসি মৎস্য চাষ প্রকল্পে ৪০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার টাকা। ২২ মণ ধান পেয়েছেন। প্রতি মণ ধান ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করলে তিনি এখন ১১ হাজার টাকা পাবেন। তবে তিনি এই ধান বিক্রি করবেন না। তিনি বলেন, বিষমুক্ত ধানের আবাদ করে তিনি খুশি। তাঁর তিন সদস্যের পরিবারের সারা বছরের ভাতের জন্য আর ভাবতে হবে না। অন্যান্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেই পরিশ্রম করে ধান চাষ করেন। এ কারণেই ধানে লাভবান হয়েছেন। তাঁর মতে, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কোনো কোনো জমিতে ফলন খুব ভালো হয়েছে।

উপজেলার বেকিনগর গ্রামের কৃষক শাহজাহান বলেন, তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি ৩০ শতাংশে ফলন হয়েছে ১৮ থেকে ২০ মণ। খরচ হয়েছে মোট ৪ হাজার টাকা। প্রতি মণ ধান ৫০০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বিষমুক্ত ধান পেয়েছেন। এতে তাঁর পরিবারের ভাতের জোগান নিয়ে তাঁকে আর ভাবতে হবে না। তিনি বলেন, এ রকম প্রত্যেক কৃষকই ধান চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

উপজেলার আদমপুর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, তিনি তিন একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। পরিবারের সদস্যদের শ্রমঘামে প্রতি ৩০ শতাংশে খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা। প্রতি ৩০ শতাংশে ফলন হয়েছে ১৮ মণ। এতে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর শিলাবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণের পরও ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এতে তিনি অনেক বেশ খুশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সারোয়ার জামান বলেন, বোরো ধান আবাদে কৃষক সচেতন হলে কম খরচে বিষমুক্ত অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও চলতি বছর বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা লাভবান হয়েছেন।