রেস্তোরাঁর বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট

পচা-বাসি খাবার সংরক্ষণ, ক্ষতিকর রং মিশিয়ে খাবার বিক্রির অপরাধে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা।
শিল্পকারখানার এসব রং ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন অভিজাত রেস্তোরঁার খাবার তৈরিতে।
শিল্পকারখানার এসব রং ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন অভিজাত রেস্তোরঁার খাবার তৈরিতে।

ভেতরের পরিবেশে আভিজাত্যের কমতি নেই। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে জৌলুশময় অন্দরসজ্জা করা হয়েছে। খাবারের কাটতিও বেশ। তবে যতটা না বাইরের চাকচিক্য, ভেতরের চিত্র ততটা উল্টো। বাইরের চাকচিক্য পেরিয়ে রসুইঘরে গেলেই চোখে পড়ে রেস্তোরাঁগুলোর হতশ্রী দশা।

গতকাল বুধবার ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে বিভিন্ন নামীদামি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে রান্নাঘরের নোংরা, স্যাঁতসেঁতে অবস্থা দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চালিয়ে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র‍্যাব-২ ও বিএসটিআইয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনা করেন র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী হাকিম সারওয়ার আলম।

ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে জি এইচ হাইটস নামের ১৪ তলাবিশিষ্ট ভবনটির সাতটি তলাতেই নামীদামি রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শুরুর পর বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে সটকে পড়েন।

অভিযানের শুরুতেই পঞ্চম তলায় আফটার আওয়ারস নামের এটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা রং খুঁজে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই রং বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হতো। তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সেখান থেকে নবম তলায় অবস্থিত দ্য সুইটসিন কফি নামের আরেকটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। সেখানকার অবস্থা আরও করুণ। বাইরে আভিজাত্যের কোনো ধরনের কমতি রাখা না হলেও রান্নাঘরে ঢুঁ মেরে দেখা যায়, যেখানে থালাবাসন রাখা হয়েছে, সেখানে মরা তেলাপোকা ও বর্জ্য ঠাসা। রান্নায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিক্রয় নিষিদ্ধ এসিআই ব্র্যান্ডের লবণ। কয়েক দিন আগের ফ্রায়েড রাইচ, চিকেন রোলসহ নানা ধরনের খাবার সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

এরপর ১৪ তলায় অবস্থিত পিৎজা ইনে গিয়ে পচা মাংস খুঁজে পায় র‍্যাব। এই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। তখনই সন্দেহ হয় অভিযানসংশ্লিষ্টদের। পরে ভেতরে গিয়ে ১১ দিন ধরে ফ্রিজের একটি অংশে মুরগির পচা মাংস সংরক্ষণ করা অবস্থায় পাওয়া যায়। পিৎজা ইনের পর নবম তলায় অবস্থিত সাবরোসা নামের আরেকটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে হতবাক হয়ে যান কর্মকর্তারা। এই রেস্তোরাঁয় রান্নাঘরের ভেতরে পরিচ্ছন্ন রাখতে যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য জমে গোটা রান্নাঘর দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। র‍্যাব কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিতে পচা–বাসি খাবার রেস্তোরাঁয় বিশেষ একটি স্থানে লুকিয়ে রাখা হলেও পরে তা উদ্ধার করা হয়।

এরপর দোতলায় অবস্থিত গ্লোরিয়া জিনস নামের রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরুর পর আধা ঘণ্টা ধরে কোনো অসংগতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে জুতা রাখার বাক্সের কাছে জায়নামাজ মোড়ানো দুটি বাক্স উদ্ধারের পর দেখা গেছে, সেখানে পচা মাছ ও মাংস লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর নতুন করে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে বিএসটিআইয়ের লোগো ব্যবহার করা খেজুর পুডিং ও রুটি উদ্ধার করা হয়। র‍্যাব সদস্যদের উপস্থিতি দেখে দ্রুত ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি দই, বিস্কুটসহ আরও কয়েকটি পণ্য উদ্ধার করা হয়।

খাবারে ক্ষতিকর রং ব্যবহার, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারসহ নানা অসংগতির কারণে আফটার আওয়ারসকে চার লাখ টাকা, দ্য সুইটসিন কফিকে তিন লাখ, পিৎজা ইনকে দুই লাখ, সাররোসাকে তিন লাখ, গ্লোরিয়া জিনস কফিকে সাড়ে চার লাখ ও কমিক কফিকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।