ইয়াবার 'মূল হোতা' সাইফুল আত্মসমর্পণ করতে চান

সাইফুল করিম
সাইফুল করিম

ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম প্রধান কারিগর সাইফুল করিম পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্থানীয় একটি মাধ্যম ব্যবহার করে তিনি আত্মসমর্পণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই মাধ্যমটি গত ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে ১০২ মাদক ব্যবসায়ীকে আত্মসমর্পণ করাতে ভূমিকা রেখেছিল। পুলিশের একটি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে এ দেশে প্রথম ইয়াবার চালান ঢোকে। সেই চালানটি সাইফুল করিম এনেছিলেন বলে বিভিন্ন আসামির জবানবন্দি ও বক্তব্য থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ইয়াবা ব্যবসার আড়ালে রাতারাতি ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন টেকনাফের বাসিন্দা সাইফুল করিম। কক্সবাজার জেলা থেকে সর্বোচ্চ কর দিয়ে সিআইপি মর্যাদাও লাভ করেন। এ কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। গত বছরের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকায় একটি চালানে ১৩ লাখ ইয়াবা বড়ি আটক হওয়ার পর সাইফুল করিমের নাম জানাজানি হয়। এর পরপরই তিনি গা ঢাকা দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সাইফুল করিম দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এই কাজে স্থানীয় যে মাধ্যমটি ভূমিকা রেখেছিল তারা সাইফুল করিমকে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসার মূল হোতাসহ কয়েকজন আত্মসমর্পণ করতে চাচ্ছেন বলে খবর পেয়েছি। শর্ত সাপেক্ষে যে কেউ আত্মসমর্পণ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে আইন নিজের গতিতে চলবে।’

>
  • ১৯৯৭ সালে এ দেশে প্রথম ইয়াবার চালান ঢোকে
  • চালানটি সাইফুল এনেছিলেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে
  • সাইফুল দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন

পুলিশ সুপার মাসুদ আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক হয়েছেন। অনেকে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। তবে বড় চোরাকারবারিদের দু-একজন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে তাঁদের ধরতেই হবে। তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব।’

গত বছরের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের হালিশহরে এক চালানে ১৩ লাখ ইয়াবা বড়ি আটক হওয়ার পর কক্সবাজার ও মিয়ানমারের মূল চোরাকারবারিদের নাম বেরিয়ে আসে। তাঁদের একজন সাইফুল করিম। ১৩ লাখ ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত দুই আসামি রশিদ ওরফে মুন্না ও আশরাফ আলী চট্টগ্রামের আদালতে সাইফুল করিম এবং মিয়ানমারের চোরাকারবারি আবদুর রহিমকে জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে ১৮ কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়টি উঠে আসে। হালিশহরের অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ। তিনি এখন চট্টগ্রামে কাউন্টার টেররিজমের দায়িত্বে আছেন।

উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সাইফুল করিম ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান এনেছিলেন। দেশের লাখ তরুণ-তরুণীকে মাদকাসক্ত করার পেছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে। ১৩ লাখ ইয়াবা বড়ি একসঙ্গে আটক হওয়ার পর তাঁর সম্পর্কে আমরা এসব তথ্য পাই।’

শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ‘সাইফুল এবং মিয়ানমারের রহিম ধরা পড়লে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। সাইফুল আমাদেরও ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় এক নম্বর, কক্সবাজারের গডফাদারের তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে সাইফুলের নাম।