মনির হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্ত্রী ও ভাইস পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

মনিরুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
মনিরুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডায় মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে তাঁর স্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ঢাকার আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম।

মনির হত্যায় অভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন তাঁর স্ত্রী কাজল রেখা, ভাই আজমল হক, আবদুল মান্নান, সোহাগ ও এক কিশোর।

গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বাড্ডার সাতারকুলের মেরুল হিন্দুপাড়ার রাম মঙ্গলের বাড়ির পশ্চিম পাশে মনিরের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর স্ত্রী কাজল রেখা এবং ভাই আজমল হক মিন্টু কেন এবং কীভাবে মনিরুজ্জামানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মনিরুজ্জামান পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। তাঁর স্ত্রী কাজল রেখা। এই দম্পতির দুই সন্তান। কাজল রেখা পেশায় গৃহিণী। মনির রং মিস্ত্রির কাজ করে অনেক কষ্টে তিনি সংসার চালাতেন। তাঁর ভাই আজমল হক ঢাকায় বাইং হাউসে চাকরি করতেন। কাজের সুবাদে মনির বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতেন। এই সুযোগে কাজল রেখার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন আজমল। দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কাজল রেখা এবং আজমল দুজনই তখন ভাবেন, মনিরুজ্জামান বেঁচে থাকলে তাঁদের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন থেকে তাঁরা মনিরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। আজমল ঢাকায় তাঁর পরিচিত আবদুল মান্নানের সঙ্গে চুক্তি করে যে, তাঁর ভাই মনিরকে খুন করলে এক লাখ টাকা দেবেন। আজমলের কথায় রাজি হয়ে যান মান্নান। মনিরকে খুন করার জন্য অগ্রিম ত্রিশ হাজার টাকা দেন আজমল। সেই সঙ্গে দুটি চাকুও কিনে দেন। মান্নান তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে মনিরকে হত্যা করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মনিরকে ফোন দেন তাঁর ছোট ভাই আজমল। মনিরকে বলেন, তিনি বিয়ে করবেন। ঢাকায় একটা মেয়ে তিনি দেখেছেন। আজমলের কথায় বিশ্বাস করে ঢাকায় আসতে রাজি হন মনির। গত বছরের ৭ আগস্ট রাত ১০টায় মনির বাসে করে দিনাজপুর থেকে গাবতলী আসেন। তখন আজমল এবং কাজল রেখা দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। মনিরের ঢাকায় আসার খবর আজমল জানিয়ে দেন ভাড়াটে খুনি মান্নানকে। মান্নান তখন তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাবতলী আসার পর মনির তাঁর ভাই আজমলকে ফোন দেন। আজমল তখন মনিরকে বলেন, তিনি কাজে ব্যস্ত আছেন। তাঁকে (মনির) নিয়ে আসার জন্য তিনি লোক পাঠাবেন। তাঁদের সঙ্গে মনির যেন আজমলের বাসায় আসেন। আজমল মনিরকে বাড্ডার নতুন বাজারে আসতে বলেন। নতুন বাজারে আসার পর ভাড়াটে খুনি মান্নান মনিরের সঙ্গে দেখা করেন। মান্নান তখন মনিরের সঙ্গে আজমলের কথা বলিয়ে দেন মুঠোফোনে। আজমল মনিরকে মান্নানের সঙ্গে বাসায় চলে আসতে বলেন। ভাড়াটে খুনি মান্নান তখন তাঁর দুই সহযোগী সোহাগ, অন্যজন কিশোরকে ডাকেন। তিনজনই মনিরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। নতুন বাজারে মনিরকে চা খাওয়ান মান্নান। পরে দুটি রিকশা নিয়ে ১০০ ফিট রাস্তায় এক নম্বর সেতুর কাছে আসেন। রিকশা দুটি ছেড়ে দেন। তখন চারজন মিলে হাঁটতে থাকেন। মনির সামনে হাঁটতে থাকেন। মান্নানসহ তিনজন পেছনে হাঁটতে থাকেন। মান্নান তাঁর কাছে থাকা চাকু বের করে কিশোরের কাছে দেন। ওই কিশোর তখন মনিরের গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করেন। মনির তখন নিচে পড়ে যান। মনির চিৎকার করে বলেন, ‘ভাই এইটা কী করলেন?’ মান্নান তখন মনিরের গলায় ছুরিকাঘাত করেন। সোহাগ মনিরের পেটে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলে মনির মারা যান। এরপর মনিরের কাছে থাকা দুটি মুঠোফোন এবং একটি ব্যাগ নিয়ে চলে যান তাঁরা। পরে সেখানকার একটা হোটেলে গিয়ে তিন আসামি হাত ধুয়ে ফেলেন। মনিরের ভাইয়ের দেওয়া ত্রিশ হাজার টাকা তিনজনে ভাগ করে নেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মনিরকে হত্যা করার পর প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য আজমল হক বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় কাজল রেখাকে গ্রেপ্তার করার পর প্রকৃত ঘটনা আদালতের কাছে স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। ওই মামলায় বাড্ডা থানার এসআই শহীদুল আলম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজল রেখা দুটি সিম ব্যবহার করতেন। একটি গ্রামীণ, অপরটি রবি। কাজল রেখার গ্রামীণ ফোন নম্বর জানতেন না আজমল। রাত ১১টার পর সেদিন আজমল কাজলকে ফোন দিয়ে বলেন, তাঁর ভাই মনিরকে হত্যা করা হয়েছে। এই কথা শোনার পর কাজল গ্রামীণ ফোনের সিমটা ফেলে দেন। আজমল এবং কাজলের মধ্যে আট থেকে নয় বছর ধরে পরকীয়া সম্পর্ক চলে আসছিল।