গাজীপুরে দুই মহাসড়কে যানজট নেই, তবু শঙ্কা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়। দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার গাজীপুরের সীমানায়। প্রতিবছরই ঈদের ছুটির সময় যানজট বেধে যায়। তবে এবার দুই পথেই যানজটের আশঙ্কা কম। তারপরও শঙ্কা আছে মানুষের মনে। এই শঙ্কা থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা পরিদর্শন করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার আনোয়ার হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। পরিদর্শনকালে তাঁরা প্রয়োজনীয় এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কথা বলেন।

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে সড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজটের খবর আসেনি। মহাসড়ক দুটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

পুলিশ ও যাত্রীরা বলছেন, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের জয়দেবপুর-এলেঙ্গা অংশ চার লেনে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি দুটি উড়ালসড়ক এবং চারটি সেতু ও ওভারপাস চালু হয়েছে। এসব কারণে মহাসড়কে সময় লাগছে অনেক কম। তারপরও ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ আরও বাড়লে এ অবস্থা থাকবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা আছে। এই আশঙ্কার কারণ হচ্ছে সড়কে এখনো অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। আবার যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উন্নতি সহজেই চোখ পড়ে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ী, কোনাবাড়ী থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। তবে মহাসড়কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নির্মিত উড়ালসড়ক দুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এ কারণ এখন পর্যন্ত কোথাও যানজট চোখে পড়ছে না। একই প্রকল্পের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭০ ভাগ কাজ শেষ। গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস থেকে শুরু চার লেন মহাসড়কের। নওজোড় পর্যন্ত চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সেখান থেকে দুই কিলোমিটারের মতো অংশ এখনো দুই লেনের। নওজোড়ের পর কড্ডায় নতুন সেতু চালু হয়েছে। কড্ডার পর তুরাগ নদের সেতু এখনো দুই লেনের। এরপর বাইমালে মহাসড়ক চার লেনের। বাইমালের পর কোনাবাড়ী বাজার। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাজার। উড়ালসড়ক চালুর আগে এই বাজার এলাকা পার হতেই লাগত দুই ঘণ্টা। উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় পাঁচ মিনিটেই অতিক্রম করা যাচ্ছে ওই বাজার। অবশ্য চার কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়কটি চালু হলেও এখনো দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়নি।

>

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।
তবে সন্ধ্যার পর থেকে সড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সফিপুরের পর চন্দ্রা ত্রিমোড়। ওই মোড়ে মিলিত হয়েছে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়ক এবং ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক। উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার গাড়ি যায় এই মোড় হয়ে। গাবতলী থেকে যেসব বাস উত্তরবঙ্গ যায়, সেগুলো ঢাকা-সাভার-নবীনগর, আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা দিয়ে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়। মহাখালী ও গাজীপুর থেকে যেসব বাস যায়, সেগুলোকে ভোগড়া, কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পাড়ি দিতে হয়। টাঙ্গাইলের বাসও চলে কালিয়াকৈর উপজেলার এই চন্দ্রা ত্রিমোড় হয়ে।

কোনাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে গতকাল বিকেল থেকে ঘরমুখী মানুষ পথের যাত্রা শুরু করেছে। চন্দ্রাসহ আশপাশের এলাকায় তাঁদের অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা আছে। পর্যাপ্ত রেকার রাখা হয়েছে। কোনো গাড়ি বিকল হলেই দ্রুত সড়ক থেকে সেটি সরিয়ে নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) গোলাম সবুর বলেন, দুটি মহাসড়কে গাজীপুর জেলা পুলিশের এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া চন্দ্রা ত্রিমোড়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে সার্বক্ষণিক সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।