ফিরতি টিকিট পেতেও রাত-দিন লাইনে

রাজশাহীতে ট্রেনের ফিরতি টিকিটের জন্য এভাবেই রাত–দিন সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে টিকিটপ্রত্যাশীদের। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহীতে ট্রেনের ফিরতি টিকিটের জন্য এভাবেই রাত–দিন সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে টিকিটপ্রত্যাশীদের। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে ট্রেনের ফিরতি টিকিট পেতে যাত্রীদের এক দিন আগে থেকে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আগামী ৯ জুন ঢাকায় ফেরার টিকিটের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রীরা সারিতে দাঁড়িয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালেও তাঁদের সবাই টিকিট পাননি। তাঁরা সারিতে অপেক্ষায় রয়েছেন। রাত–দিন লাইনে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ চেয়ার, টুল, এমনকি মাদুর পেতে বসে রয়েছেন।

এদিকে টিকিট পেতে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে অর্ধেক টিকিট ‘রেলসেবা’ নামের অ্যাপে ছাড়া হয়েছে। যাত্রীরা বলছেন, সেখানেও ঢোকা যাচ্ছে না।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনগুলোর প্রতিদিনের টিকিটসংখ্যা ৪ হাজার ৬৬৩। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। এর অর্ধেক টিকিট অনলাইনে পাওয়ার কথা থাকলেও ‘রেলসেবা’ অ্যাপ ঠিকভাবে কাজ না করায় প্রথম দিন থেকেই যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট কিনতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন।

আজ সকাল সাড়ে নয়টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী ট্রেনের সব কটি টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। সারিতে বসার টুল, চেয়ার ও মাদুর পাতা রয়েছে। এতে নারী-পুরুষ একই সারিতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের জন্য আলাদা কোনো সারি নেই। বিশেষ করে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) কামরার টিকিটপ্রত্যাশীদের নারী-পুরুষ একই সারিতে দাঁড়াতে হচ্ছে। এ নিয়ে নারী যাত্রীরা আপত্তি তুলছেন।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দা কেয়া গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে এসি কামরার চারটি টিকিটের জন্য সারিতে দাঁড়িয়েছেন। তিনি একটি প্লাস্টিকের টুল নিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার সারা দিন গেছে সারিতে। সারা রাতও গেছে সেখানেই। আজ সকাল ১০টায় তাঁর সামনে অন্তত আরও ২৫ জন যাত্রী রয়েছেন। তার আগে যদি টিকিট শেষ না হয়, তাহলে তিনি টিকিট পাবেন। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তিনি তাঁর বোন ও দুলাভাইয়ের জন্য টিকিট কাটতে এসেছেন। তাঁরা ঈদ কাটাতে বাড়ি ফেরার টিকিট পেয়েছেন। আগামী ৯ জুন তাঁদের ঢাকায় ফেরার টিকিটের জন্য তিনি এই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। সৈয়দা কেয়ার অভিযোগ, রাত–দিন একই সারিতে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা বিব্রতকর। মেয়েদের জন্য আলাদা সারির ব্যবস্থা করা জরুরি।

আলহাজ আব্দুস সোবহানের বাড়ি রাজশাহী নগরের আমবাগান এলাকায়। তিনি বয়স্ক। একটি টুল নিয়ে সারিতে বসে আছেন। কাল সকাল সাড়ে ১০টায় এসে তিনি সারিতে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অবশ্য রাতে তাঁর জায়গায় পরিবারের আরেকজন সদস্যকে রেখেছিলেন। আজ সকাল ৯টা ৫১ মিনিটে তাঁর সামনে আরও ২০ জন টিকিটপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাঁরা সবাই পাওয়ার পর তিনি পাবেন, এই ভরসায় বসে রয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেসমিন খাতুন গতকাল বেলা তিনটায় এসে সারিতে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায়। তিনি একটি টুলে বসে রয়েছেন। তিনি তাঁর ভাই ও ভাবির ঢাকায় ফেরার টিকিটের জন্য এসেছেন। জেসমিন বলেন, তিনি নিজেই এই সারিতে রাত পার করেছেন।

ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজের শিক্ষক বিলকিস আরা একটি প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে গতকাল দুপুর থেকে সারিতে রয়েছেন। তিনি রাজশাহীতে তাঁর বাবার বাসায় ঈদ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, যাঁরা এই দুই দিন ধরে সারিতে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন। তালিকা অনুযায়ী তাঁর ৪৪ নম্বরে থাকার কথা। এখন সেই তালিকাও ঠিক থাকছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাউছার আলী তাঁর বোন ও দুলাভাইয়ের ঢাকায় ফেরার টিকিটের জন্য এসেছেন। তিনি সারিতে একটি মাদুর ও চাদর পেতেছেন। গতকাল বিকেলে এসেছেন। তালিকা অনুযায়ী তাঁর ক্রমিক নম্বর ৬০। তাঁর মাদুরে আরও দুজন নারীও বসে অপেক্ষা করছিলেন।

এদিকে অর্ধেক টিকিট ‘রেলসেবা’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়ার কথা। যাত্রীদের অভিযোগ, ফিরতি টিকিট বিক্রির প্রথম দিন গত বুধবার সকাল নয়টার আগপর্যন্ত রেলসেবা অ্যাপ স্বাভাবিক ছিল। অ্যাপে প্রবেশ করে দেখা যায়, বরাদ্দকৃত সব টিকিটই অবিক্রীত আছে। কিন্তু টিকিট বিক্রির সময় ঠিক নয়টার পর থেকেই অ্যাপে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এদিকে সারা দিন রেলসেবা অ্যাপ সচল না হলেও বিকেল পাঁচটার পর তাতে প্রবেশ করা যায়। তবে রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার ৭ জুনের জন্য ৪টি টিকিট কিনতে ‘সার্চ’ দেওয়া হলে অ্যাপ বলছে, ‘মোবাইল কোটা টিকিট নট অ্যাভেইলেবল’। আজ সকাল ১০টা ৪১ মিনিটে টিকিট কেনার চেষ্টা করে দেখা যায়, অ্যাপের সার্ভার বন্ধ। ১১টা ৪৮ মিনিটের সময় চেষ্টা করেও একই অবস্থা দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রধান বাণিজ্য ব্যবস্থাপক (সিসিএম) শাহনেওয়াজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠাতে বলেন। প্রথম আলোর পাঠানো খুদে বার্তার জবাবে তিনি লেখেন, অনলাইন ‘সিএনএস’–এর কাজ। তাঁদের কিছু করার নেই।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৫ জুন ঈদের দিন ধরে ৩০ মে বিক্রি হয়েছে ৮ জুনের ফিরতি টিকিট, শুক্রবার (৩১ মে) ৯ জুনের, ১ জুন ১০ জুনের এবং ২ জুন টিকিট মিলবে ১১ জুনের।