বগুড়ার তরুণীরা মজেছেন 'গারারা'য়

বগুড়ার বিপণিবিতানে চলছে ঈদের পোশাক বিক্রি। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়ার বিপণিবিতানে চলছে ঈদের পোশাক বিক্রি। ছবি: সোয়েল রানা

অনেকটা স্কার্টের মতো কামিজের দৈর্ঘ্য হাঁটু পর্যন্ত। সঙ্গের সালোয়ার হাঁটুর কাছে কুঁচি দেওয়া। কুঁচি বাড়তি ঘের হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। জর্জেট, সিল্ক, কটন ও নেট কাপড়ের তৈরি এই পোশাকের নাম ‘গারারা’। দামে ভিন্নতার পাশাপাশি রঙেও রয়েছে বৈচিত্র্য। এবার বগুড়ার ঈদ বাজারে বিক্রিতে সাড়া ফেলেছে গারারা। শহরের নামীদামি পোশাকের দোকান সেজেছে বাহারি রঙের গারারায়। ভারত থেকে আসা গারারার সেট সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এবারের ঈদে ভারতীয় পোশাক গারারায় মজেছেন বগুড়ার তরুণীরা। ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের সুবাদে হালে নজর কেড়েছে বাংলাদেশি তরুণীদের। অভিজাত শপিংমলগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো দোকানে গারারা ৫০০ থেকে ৭০০ সেট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়েছে।

এবারে সব মিলিয়ে ঈদে এবার বিক্রিবাট্টা বেশ ভালো। ঈদ উপলক্ষে দেশীয় কটন, সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন কাপড়ে হাতের কাজ, মেশিন এমব্রয়ডারির থ্রি-পিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, তরুণদের নজর যথারীতি শার্ট, টি-শার্ট এবং সুতি, সিল্ক ও তসরের পাঞ্জাবিতে।

গতকাল শুক্রবার রাত ১১টায় বগুড়ার রানার প্লাজায় অভিজাত সব পোশাকের দোকানে দেখা গেল, রাতের বগুড়ায় জমে উঠেছে জমজমাট কেনাবেচা। ঈদ বাজার উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে শহরের বহুতলবিশিষ্ট অভিজাত এই বিপণিকেন্দ্র। পোশাকের দোকান থেকে শুরু করে জুতা-স্যান্ডেলের দোকানেও জমে উঠেছে জমজমাট কেনাবেচা। দোকানিরা বলছেন, দিনের বেলা ভিড় কম থাকলেও ইফতারের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ছে বিক্রি। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় তত বাড়ছে। জমজমাট কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ক্রেতার ভিড়ে দম ফেলানোর ফুরসত নেই বিক্রয়কর্মীদের। প্রায় সব দোকানে একদরে চলছে কেনাবেচা। ‘ফিটফাট’ নামে একটি পোশাকের দোকানে আগ্রহ নিয়ে থ্রি-পিস দেখছিলেন কলেজপড়ুয়া তরুণী ফারিয়া কান্তা। বিক্রয়কর্মী কয়েকটি থ্রি-পিস মেলে ধরে বললেন, এই ঈদের সেরা আকর্ষণ ভারতীয় সিল্ক কাতানের থ্রিপিস গারারা। রানার প্লাজার প্রথম ও দোতলার আড়ংয়ের শোরুমে দেখা গেল প্রচণ্ড ভিড়। তরুণী বিনতি রহমান বলেন, ‘এখানে পরিবারের সবার পোশাক রয়েছে। পছন্দের থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, জিনস ছাড়াও আড়ং থেকে ছোটদের পোশাক কিনেছি।’

আড়ংয়ের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, গরমের দিনে ঈদ বলে এবার সুতি পোশাকের কদর বেশি। সুতি থ্রি–পিসের সঙ্গে জিনসের প্যান্ট কিনছেন তরুণীরা। দাম ১ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আড়ংয়ে সুতির থ্রি–পিস ছাড়াও ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে মসলিন, হাফ সিল্ক, জামদানি, মিরপুর কাতান শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের সুতি, সিল্ক ও তসর পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেল রানার প্লাজার ওয়েস্টার্ন, ডেলিকেট, নকশি ফ্যাশন, ফ্যাশন ফেয়ার ল্যান্ড, ড্রেস স্পট, নারী ফ্যাশন, গুড উইল, অপহ্নরী ফ্যাশন, মিট মি, মাত্রা, সবুজ কানন, ট্রেন্ডি ফ্যাশন, ক্যাটকিন, আরশি ফ্যাশন, গোল্ডেন আই, রনি ক্লথ স্টোরসহ অন্যান্য দোকানেও।

রাতের বগুড়ায় জমজমাট ঈদের কেনাবেচার চিত্র দেখা গেল শহরের জলেশ্বরীতলার রোমেনা আফাজ সড়ক এবং শহীদ আবদুল জব্বার সড়কে ইজি, ইনফিনিটি এক্সপ্রেস, লুবনান, আর্টস্ট, দেশী দশে অঞ্জন’স, সৃষ্টি, বাংলার মেলা, রঙ, সাদাকালো, ফড়িং, ক্যাকটাস, ঠিকানা, সুকন্যা, চৌকাঠ, শ্রোতীধারা, দর্জিবাড়ি, শৈশব, সুতি সম্ভার, জেন্টেল পার্ক, ম্যান্স ওয়াল্ড, রহমানিয়াসহ অন্যান্য দোকানেও।

ক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলো। ছবি: সোয়েল রানা
ক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে বিপণিবিতানগুলো। ছবি: সোয়েল রানা

শহরের রোমেনা আফাজ সড়কের ‘কাশবন’ ফ্যাশন হাউসে উপচে পড়া ভিড় ছিল তরুণীদের। এখানে ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে আনা জর্জেট, সিল্ক ও সুতি কাপড়ের থ্রি–পিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় জর্জেট থ্রি–পিস ১ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার, পাকিস্তানি সুতি থ্রি–পিস ১ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার, জামদানি শাড়ি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার, শিশুকন্যাদের পোশাক ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জমজমাট ঈদ বাজারের একই চিত্র শহরের মধ্যবিত্তদের কেনাকাটার ভরসা নিউ মার্কেট ও পুকুরপাড় নিউ মার্কেটের পোশাকের দোকানগুলোতেও। শহরের সবচেয়ে বড় বিপণিকেন্দ্রে নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা কম। নিউ মার্কেটে রনি ক্লথ স্টোরে দুটি শাখায় মেয়েদের জর্জেট, সিল্ক ও সুতি থ্রি–পিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। নিউ মার্কেটের দোতলায় গিয়ে দেখা গেল, রনি ক্লথ স্টোরে ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি–পিস বিক্রি হচ্ছে ধুন্ধুমার।

রনি ক্লথ স্টোরের মালিক কালাচাঁদ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারে ঈদে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ভারতীয় পোশাক গারারা। দশম রোজা থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০টি গারারা বিক্রি করেছি।’

রনি ক্লথ স্টোরের বিক্রয়কর্মী রেজা আকন্দ বলেন, তাঁদের দোকানে ঈদ উপলক্ষে ভারতের মুম্বাই, গুজরাট, দিল্লি এবং পাকিস্তান থেকে মেয়েদের জন্য পোশাক আনা হয়েছে। বেচাবিক্রি এবার ভালো। তিনি জানান, ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক এবার ঈদে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সারারা, গাউন, ফ্রক, কুর্তিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। জর্জেট ফেব্রিকস এবং শিফনের মধ্যেও এ পোশাকগুলো হয়।

ঈদ বাজার জমে উঠেছে নিউ মার্কেটের শাড়ির দোকানগুলোতেও। সৌরভ বস্ত্রবিতানের সৌরভ কুমার সাহা বলেন, ধানের দাম কম হওয়ায় এবার ঈদবাজারে গ্রাম থেকে আসা ক্রেতার সমাগম কম। এ কারণে গত বছরের ঈদের চেয়ে এবার ব্যবসা কিছুটা মন্দা। তবে ইতিমধ্যেই চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাস পাওয়ায় শহরের ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। এবার গরমে ঈদ হওয়ায় সুতি কাজ করা শাড়ির কদর বেশি।

তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় জারদৌসি, রাজগুরু, রাজটেক, গাদওয়ান, সফট সিল্ক, দেশি জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি। এসব শাড়ি তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। নিউ মার্কেটের কবির ক্লথ স্টোরের বিক্রেতা পল্লব সাহা বলেন, অন্যবারের চেয়ে এবার নিউ মার্কেটে ঈদের পোশাক কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় কম।