ইয়াবা ব্যবসায়ী ভুট্টোর ৩১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

টেকনাফের আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোর দুটি দোতলা বাড়িসহ প্রায় ৩১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো
টেকনাফের আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোর দুটি দোতলা বাড়িসহ প্রায় ৩১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করে পুলিশ। ছবি: প্রথম আলো

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় থাকা টেকনাফের আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোর দুটি দোতলা বাড়িসহ প্রায় ৩১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বেলা একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত টেকনাফ থানা–পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভুট্টো ও তাঁর পরিবারের স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদসমূহ জব্দ করেন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। ভবন দুটি জব্দের সময় বাড়িতে থাকা নুরুল হক ভুট্টো ও তাঁর ভাই নুর মোহাম্মদের পরিবারকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

গত মার্চ মাসে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুরুল হক ভুট্টোর ভাই নুর মোহাম্মদ নিহত হন। নুরুল হক ভুট্টো ও তাঁর বাবা এজাহার মিয়া কয়েক মাস ধরে আত্মগোপনে আছেন। সম্প্রতি ভুট্টো আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বলে প্রচার রয়েছে। ভুট্টোর বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ায়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে পুলিশ ইয়াবা সম্রাট নুরুল হক ভুট্টো ও তাঁর ভাই নুর মোহাম্মেদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছে। তিন ঘণ্টার অভিযানে পুলিশ দুই তলা দুটি ভবন বাড়ি এবং ১১টি স্থানে থাকা প্রায় ২০ একর জমি জব্দ করেছে। এখন থেকে এ সম্পদের দেখাশোনা করবে পুলিশ। ইয়াবার টাকায় এসব সম্পদ কেনা হয়েছে।

ওসি প্রদীপ দাশ বলেন, গত মার্চে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুর মোহাম্মদ নিহত হওয়ার পর তাঁর ভাই নুরুল হক ভুট্টো ও বাবা এজাহার মিয়া আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে। ভুট্টোর বিরুদ্ধে টেকনাফসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, মানব পাচার, হত্যাসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। ইয়াবার টাকায় কেনা ভুট্টো পরিবারের অন্যান্য সম্পদেরও অনুসন্ধান চলছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় আদালত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টো ও তাঁর স্বজনদের স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত সম্পদ ক্রোকের জন্য এসপিকে (পুলিশ সুপার) রিসিভার নিয়োগ দিয়েছেন। ভুট্টো পরিবারের জব্দ করা দুটি ভবন রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সেবা ও শান্তি শৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীর দখলে রাখা হবে। অন্যান্য ক্রোকি সম্পদ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশের হেফাজতে থাকবে।

মানি লন্ডারিং মামলা
টেকনাফ থানায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট (ক্রিমিনাল পারমিশন মিস মামলা নং-৫৭৭/২০১৯) নুরুল হক ভুট্টো, ভাই নুর মোহাম্মদ ও বাবা এজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগ সিআইডি। এ মামলায় গত ২৩ মে তিনজনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ। ক্রোকবদ্ধ সম্পত্তিসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুলিশ সুপার কক্সবাজারকে তত্ত্বাবধায়ক (রিসিভার) নিয়োগ করা হয়। মূল মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তত্ত্বাবধায়ক।

বদির সহযোগিতায় ‘ইয়াবা ভুট্টো’:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের একাধিক তালিকায় থাকা টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোর সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালের ১৩ মে নাজিরপাড়ায় ভুট্টো বাহিনীর ইয়াবা কারবার নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা কক্সবাজারের পাঁচ টেলিভিশন সাংবাদিক ভুট্টো বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছিলেন। সন্ত্রাসী হামলায় তখন গুরুতর আহত হন সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার সুজা উদ্দিন রুবেল ও তাঁর ক্যামেরা পারসন ফয়েজ আহমদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু ও তাঁর ক্যামেরা পারসন শরীফ ও ৭১ টেলিভিশনের কক্সবাজার ক্যামেরা পারসন বাবু দে। সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে সাংবাদিকদের আহত করে এবং ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

নুরুল হক ভুট্টোর বাড়ির ভেতরের অংশ। ছবি: প্রথম আলো
নুরুল হক ভুট্টোর বাড়ির ভেতরের অংশ। ছবি: প্রথম আলো

পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের পর থেকে ভুট্টো বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাহিনীর সদস্যরা খুন খারাবি, অপহরণ, লোকজনের জমি দখলে তৎপর থাকেন। সাংসদ বদির আশ্রয়–প্রশ্রয়ে তিনি তখন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা ও ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে টেকনাফের শীর্ষ ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করলেও ভুট্টোসহ বদির পরিবারের অনেকে বাইরে থেকে গেছেন। গত শুক্রবার রাতে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবার মূলহোতা সাইফুল করিম নিহত হন। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাইফুল করিমকে পাঁচ দিন আগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ নিয়ে আসেন এক রাজনৈতিক প্রভাবশালী। ধরা পড়ার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল করিম তাঁর ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত টেকনাফের বহু রাঘববোয়ালের তথ্য ফাঁস করেছেন। এখনো তাঁরা ধরাছোঁয়ায় বাইরে থাকায় সমালোচনা চলছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত কারও রক্ষা হবে না। পযায়ক্রমে সব রথি–মহারথীদেরও আইনের আওতায় আসতে হবে।