নারী আইনজীবীকে খুনের নেপথ্যে 'ক্ষোভ'

নিহত আইনজীবী আবিদা সুলতানা
নিহত আইনজীবী আবিদা সুলতানা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিহত নারী আইনজীবী আবিদা সুলতানা (৩৫) হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। তাঁকে হত্যার পেছনে আসামির ক্ষোভ কাজ করেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মামলার প্রধান আসামি তানভির আলম এ তথ্য দিয়েছেন।

আজ শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে আসামির এই স্বীকারোক্তির কথা জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন ও উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, তানভির আলম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কীভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ও কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। ক্ষোভ থেকে তিনি একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ে আবিদা সুলতানার সঙ্গে তাঁর (আসামির) সম্পর্ক খারাপ ছিল। ঘটনার দিন তর্কাতর্কির একপর্যায়ে পাথরের তৈরি পানির ফিল্টারের গোল ঢাকনা দিয়ে আবিদা সুলতানার মাথায় আঘাত করেন তানভির আলম। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরপর কাপড় দিয়ে মুখ ও গলা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি ওই দিন ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংঘটিত হয়েছে।

১০ দিনের রিমান্ডে ছিলেন আবিদা সুলতানা হত্যা মামলার প্রধান আসামি তানভির আলম। রিমান্ডের চতুর্থ দিন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করায় তাঁকে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তানভির আলম সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি গ্রামের ময়নুল ইসলামের ছেলে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘স্বীকারোক্তিতে আসামি বলেছে, আসামির সঙ্গে ওই আইনজীবীর সম্পর্ক খারাপ ছিল। আসামিকে বাসা থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। গালাগালিও করেছিলেন। এতে ক্ষোভ হয় তাঁর। ক্ষোভ থেকে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার সঙ্গে তিনি ছাড়া আর কেউ জড়িত না। তিনি একাই ছিলেন।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবিদা সুলতানা বড়লেখা উপজেলার মাধবগুল গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের মেয়ে। তিনি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন আইনজীবী। প্রায়ই ছুটির দিনে বাবার বাড়ি দেখাশোনা করতে যেতেন। ২৬ মে রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় কক্ষের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। পুলিশ ওই দিনই তাঁর পৈতৃক বাসার ভাড়াটিয়া তানভির আলমের স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তানভির আলমকে পরের দিন শ্রীমঙ্গলের বরুণা এলাকা থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আবিদা সুলতানার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেন। হত্যা মামলায় তানভির আলম, তাঁর স্ত্রী হালিমা সাদিয়া ও মা নেহার বেগম রিমান্ডে ছিলেন। তানভিরের ছোট ভাই আফছার আলম পলাতক।