অনলাইনে সব সেবা বিল পরিশোধ 'একপে'তে

পরিষেবা বিল ও ফি প্রদানের পদ্ধতি সহজ করার লক্ষ্যে শিগগিরই ‘একপে’ নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করতে যাচ্ছে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)। এ জন্য ১৬টি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা চালুর ধারাবাহিকতায় এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

একপে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জনগণ সরাসরি ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, মাস্টারকার্ড, ভিসা কার্ড, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ই-ওয়ালেটসহ বিভিন্ন পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ফি প্রদান ও বিল পরিশোধের রসিদ প্রিন্ট করতে পারবেন।

এটুআইয়ের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ল্যাব প্রোগ্রামের সমন্বয়ক তহুরুল হাসান টুটুল বাসসকে জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে পারসন টু বিজনেস (পিটুবি) পদ্ধতির কেন্দ্রীয়করণের উদ্দেশ্যে এটুআই এই একপে প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জনগণ সব ধরনের পরিষেবা বিল (চালান ব্যতীত) ও সব শিক্ষা বোর্ডের ফি দিতে পারবে।

তহুরুল হাসান টুটুল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লেনদেন হয়, যার ৯৫ শতাংশই ক্যাশভিত্তিক। এই ব্যক্তিগত লেনদেনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—পারসন টু বিজনেস (পিটুবি), পারসন টু পারসন (পিটুপি) এবং পারসন টু গভর্নমেন্ট (পিটুজি)।

তহুরুল হাসান বলেন, এই ক্যাশভিত্তিক লেনদেন ও বিল পরিশোধ জনগণের জন্য ভোগান্তিকর। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের সব পরিষেবা বিল, শিক্ষাসংক্রান্ত ফি ও অন্য সব ধরনের ফি প্রদানের পদ্ধতি সহজ ও সমন্বিত করতে এটুআই একপে নামক প্ল্যাটফর্মটি চালু করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি শিগগিরই এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি চালু করতে পারব। এ লক্ষ্যে একপে–এর সঙ্গে ইতিমধ্যে দেশের ১৬টি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।

তহুরুল হাসান আরও বলেন, ১৬টি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ৫টি, গ্যাস সরবরাহকারী ৪টি, পানি সরবরাহকারী ৩টি, সিটি করপোরেশন ২টি, টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী ১টি ও অন্য পরিষেবা সরবরাহকারী ১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, একপে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের পেমেন্ট পদ্ধতির একক প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে জনগণ সরাসরি ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, মাস্টারকার্ড, ভিসা কার্ড, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ই-ওয়ালেটসহ বিভিন্ন পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ফি প্রদান ও বিল পরিশোধের রসিদ প্রিন্ট করতে পারবে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম একপে–এর মাধ্যমে গ্রাহক বিল প্রদানের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে। প্রথমত, ডিরেক্ট পেমেন্ট; দ্বিতীয়ত ‘ইনডিরেক্ট পেমেন্ট’। ‘ডিরেক্ট পেমেন্ট’–এর ক্ষেত্রে গ্রাহক নিজে তার ইচ্ছেমতো, একপে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরাসরি যেকোনো পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে বিল দিতে পারবে। অন্যদিকে ইনডিরেক্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো ব্যাংক কিংবা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে বিল দিতে পারবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে একপে–এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, সিটি করপোরেশন, টেলিযোগাযোগ ও অন্যান্য পরিষেবা বিল দেওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষা বোর্ডের সব ফি ও সড়ক পরিবহনের সব বিল এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিমা প্রিমিয়াম, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ফি, ক্রেডিট কার্ড এবং স্থানীয় করের মতো সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে এই সেবার আওতাভুক্ত করা হবে।

ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম একপে আর্থিক সেবা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ ছাড়া ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহকে দক্ষ ও স্বচ্ছ করে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি শক্তিশালী মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।