এনজিও এসকেবির প্রধান ছয় দিনের রিমান্ডে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ (এসকেবি) নামের এনজিওর প্রধান মোহাম্মদ রেদওয়ানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোহিঙ্গা শিবিরে উগ্রবাদী প্রচার চালানোর অভিযোগে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ মে) পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত রেদওয়ানুরের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসকেবির কার্যক্রম, সন্ত্রাসী সংগঠনের অর্থদাতাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে এই রিমান্ড আবেদন করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শুক্রবার ঢাকার আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, আসামি রেদওয়ানুর এসকেবি নামের এনজিও খোলেন। রেদওয়ানুরের নিয়ন্ত্রণাধীন এনজিওটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রেদওয়ানুরের স্ত্রী চিকিৎসক ওয়ারাকাতুল জান্নাত। তাঁর ছোট ভাই সাফওয়ানুর এনজিওটির অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। রেদওয়ানুরের নির্দেশনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের অনুসারীদের দ্বারা এনজিও এসকেবি পরিচালিত হতো। পাকিস্তান, তুরস্ক, ফিলিপাইন, কানাডা, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ইসলামিক সংস্থা থেকে অনুদানের নামে এসকেবি অর্থ সংগ্রহ করত। এই অর্থ সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করত এসকেবি। আসামি রেদওয়ানুর ফিলিপাইনে ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব মুসলিম ইয়থ (ওয়ামি) নামের এনজিওর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আদালতকে জানিয়েছেন, গত ২৯ মে রেদওয়ানুর জেদ্দা কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে সিলেট বিমানবন্দরে আসেন। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে আটক করে এয়ারপোর্ট থানায় হস্তান্তর করে।

গত ৭ নভেম্বর এসকেবির আট কর্মী গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় কাউন্টার টেররিজম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুক হক বাদী হয়ে পল্লবী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্য পরিচালনার অপরাধে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে এসকেবির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।

এসকেবির আটজনকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অনুমোদন নিয়েই সংস্থাটি কাজ করছিল এবং এর সঙ্গে পাকিস্তানের একটি সংস্থার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এসকেবি ২০১৬ সালে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো থেকে অনুমোদন নেয়।

জানা যায়, ওয়ামির সঙ্গে একসময় যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরাই পরে এসকেবি নামে এনজিওর নিবন্ধন করান। ১৯৭২ সালে সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের বাংলাদেশে কার্যক্রমের শুরু নব্বইয়ের দশকে। প্রথম থেকেই এটির পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম এ দেশীয় পরিচালক। সবশেষ ২০০৫ সালে সংগঠনটির দায়িত্বে ছিলেন রেদওয়ানুর রহমান। তাঁর স্ত্রী ওয়ারাকাতুল জান্নাত এসকেবির চেয়ারম্যান। এসকেবির পরিচালনা কমিটির অন্য সদস্যরাও জামায়াত-শিবির ও ওয়ামি বাংলাদেশে ছিলেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের কর্মকর্তারা জানান, এসকেবির সঙ্গে পাকিস্তানের আল খিদমাহ ফাউন্ডেশন নামে যে এনজিওটির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে, সেটির বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ আছে। এই সংস্থা সম্পর্কে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, আল খিদমাহ ফাউন্ডেশন পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর একটি দাতব্য সংস্থা। আফগান তালেবান ও আল-কায়েদার সদস্যদের আফগানিস্তানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন করাসহ এই এনজিওর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকেরা।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, কাগজ-কলমে এসকেবির কাজ পানি ও পয়োনালা, রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া ও কোরবানির মাংস বিতরণ। জাকাত-ফিতরার নাম করে তারা বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। সেই টাকা তারা রোহিঙ্গাদের উগ্রবাদে দীক্ষিত করার কাজে ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর মৃত, আহত ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারকে এই এনজিও থেকে অর্থ সাহায্য করার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গ্রেপ্তার এসকেবির আটজন হলেন মো. সাফওয়ানুর রহমান (৩৪), সুলতান মাহমুদ (২৫), মো. নজরুল ইসলাম (৩৮), মো. আবু তাহের (৩৬), মো. ইলিয়াস মৃধা (৩০), মো. আশরাফুল আলম (২৪), মো. হাসনাইন (৩০) ও মো. কামরুল (২৮)।