দিনাজপুরে গাছ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে

দিনাজপুরের বিরলে চারটি গাছ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। ছবি: এ এস এম আলমগীর
দিনাজপুরের বিরলে চারটি গাছ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। ছবি: এ এস এম আলমগীর

নির্জন গহিন বন। চারপাশে রোদের দাপট। অথচ গাছ থেকে অনবরত ঝিরঝির করে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। এমন ঘটনা ঘটছে দিনাজপুরের বিরলের একটি বনের গাছে। বনটিতে এ ধরনের চারটি গাছ পাওয়া গেছে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা ধুলাপাথার। কালিয়াগঞ্জ বাজার থেকে দক্ষিণ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দেখা মিলবে গহিন এক বনের। রাস্তা থেকে বনের প্রায় এক কিলোমিটার গভীরে চারটি গাছের সন্ধান মিলেছে, যেগুলো থেকে সব সময় ঝিরঝির করে পানি ঝরছে। গাছগুলোর প্রতিটি নতুন কাণ্ডের পাশের ডালের বাকলের ফাটা অংশ দিয়ে এই পানি বের হচ্ছে। এতে নিচ থেকে ঝিরঝির বৃষ্টির মতো অনুভব হচ্ছে। তবে অস্বাভাবিকতা হলো, এই পানি বের হচ্ছে একধরনের স্প্রে করার মতো চাপ দিয়ে।

প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন লোক এই গাছ দেখেন। পরে লোকমুখে বৃষ্টি পড়া গাছটিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। গাছটি দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন যাচ্ছেন বনের ভেতরে।

স্থানীয় যুবক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে কখনো এই গাছ দেখিনি। তাই শোনার সঙ্গে সঙ্গে এসেছি গাছটি দেখতে।’ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার একজন সুখী টুটু বলেন, তাঁরা গাছটিকে শেখরেদারে বলে জানেন। আগেই এই গাছ তাঁরা দেখেছেন।

গাছটির বিষয়ে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডাল-পাতাসহ নমুনা সংগ্রহ করেছে দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একটি দল। ইতিমধ্যে গবেষণা কার্যক্রমও শুরু করেছে তাঁ।

উদ্ভিদবিষয়ক গবেষক, লেখক ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতিমধ্যেই গাছের পাতা, ডালসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি। একই সঙ্গে গাছটির প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনগুলো খুঁটিয়ে দেখা শুরু করেছেন। যে কয়েকটি গাছ থেকে অনবরত বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে, এটি গাটেশন প্রক্রিয়া। তবে যে পরিমাণে পানি বের হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক। এই দ্রুতগতিতে পানি বের হওয়া নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা হয়েছে, এমন তথ্য জানা নেই। এ নিয়ে অধিকতর গবেষণা হওয়া উচিত। আর তাই তথ্য-উপাত্ত ও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাছটি শনাক্তকরণসহ তথ্য–উপাত্ত ও নমুনা বিভিন্ন উন্নত গবেষণাগারে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষাকালে অনেক গাছেই অতিরিক্ত পানি শোষণ করে। এই গাছও বেশি পরিমাণে পানি শোষণ করে। নতুন কাণ্ড বা নতুন কুঁড়ি বের হওয়ার স্থানে পুরাতন কাণ্ড ভেদ করে বের হওয়ার ফলে উদ্ভিদটির ভাসকুলার বান্ডেল তথা পরিবহন কলাগুলো বেরিয়ে পড়েছে। ফলে, উদ্ভিদের মূল থেকে আরোহিত পানি কাণ্ডের ওই অংশ থেকে বিন্দু বিন্দু আকারে ঝরে পড়ছে। অতিরিক্ত পানির চাপ থাকায় ভাসকুলার বান্ডেল তথা পরিবহন কলা কাণ্ডের ছিদ্র দিয়ে পানি বাইরে সজোরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভ্যাপার বা বাষ্পায়ন না ঘটার ফলে গাছের নিচে কেউ গেলে বৃষ্টির মতো ঝরা পানি অনুভব করছে।