'৮টার ট্রেন বেলা ১টায় ছাড়লে কার মেজাজ ঠিক থাকে'

সাহ্‌রি খেয়ে আর ঘুমাননি নুরুজ্জামান। স্ত্রী রুমানাকে বলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে নাও। দেরি করা যাবে না। দেরি হলে কিন্তু ট্রেন ধরতে পারব না।’ রুমানা তাঁর দুই শিশুকে খাওয়ান। এরপর সকাল সাড়ে সাতটায় কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছান নুরুজ্জামান ও তাঁর পরিবার। তাঁদের বহনকারী ঢাকা থেকে নীলফামারীগামী নীলসাগর ট্রেন সকাল আটটায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। নয়টা বেজে যায়, তখনো ট্রেনের দেখা নেই। বাধ্য হয়ে নুরুজ্জামান স্টেশনে ঢুকে রেলওয়ের লোকজনের কাছে জানতে চান, ‘ভাই, নীলসাগর ট্রেন কখন আসবে।’ জবাব পান, আসতেছে। একটু অপেক্ষা করেন। সকাল ৮টার ট্রেন বেলা ১১টাতেও স্টেশনে আসেনি।

তখন রুমানা তাঁর স্বামী নুরুজ্জামানকে বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি এসে কী লাভ হলো। আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না।’ কোলের শিশু তখন কাঁদছে। নুরুজ্জামান স্ত্রী রুমানাকে বলেন, ‘ট্রেন যে এত দেরি করবে তা কি আমি জানতাম। যদি জানতাম, তাহলে কি এত আগে স্টেশনে আসতাম।’

ট্রেনের সিটে বসে নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে আজ ইফতারি করব। কিন্তু আমাদের কপালে তা আজ নেই। কপালে যে কী আছে, তা আল্লাহ ভালো জানেন। তবে এটুকু নিশ্চিত, রাস্তায় আজ ইফতারি করতে হবে।’ নুরুজ্জামান যখন বিরক্তির সুরে এসব কথা বলছিলেন, তখন রুমানাও আক্ষেপের সুরে কথা বলতে শুরু করেন। রুমানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজা আছি। ছোট্ট ছোট্ট দুটি বাচ্চা নিয়ে এত সময় ধরে স্টেশনে বসে আছি। বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। এত ভোগান্তি ভালো লাগে না। প্রতিবছর একই চিত্র।’

ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় নীলসাগরের যাত্রী নাজমুন নাহার ছিলেন মহাবিরক্ত। তবে ট্রেন ছাড়ার আগে উবে গেল সেই বিরক্ত। ছবি: আসাদুজ্জামান
ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় নীলসাগরের যাত্রী নাজমুন নাহার ছিলেন মহাবিরক্ত। তবে ট্রেন ছাড়ার আগে উবে গেল সেই বিরক্ত। ছবি: আসাদুজ্জামান

ক্ষোভে দুঃখে রুমানা বলে ওঠেন, ‘ঈদের সময় ট্রেনের এই লেট কি কোনো দিন বন্ধ হবে না।’

নুরুজ্জামান আর রুমানা দম্পতির পেছনের আসনে বসেছেন নুরুন্নাহার। তাঁর বাড়িও দিনাজপুর। নুরুজ্জামানদের মতো নুরুন্নাহাররাও সাহ্‌রি খেয়ে আর ঘুমাননি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সকাল সাতটার পরপরই কমলাপুর স্টেশনে চলে আসেন। নীলসাগর ট্রেনের জন্য তাঁদেরও একই অপেক্ষা। বিরক্তির সুরে নুরুন্নাহার বললেন, ‘একটা ট্রেন এত লেট করে? লেট যদি এক ঘণ্টা হয়, দুই ঘণ্টা হয়, তা মেনে নেওয়া যায়। তাই বলে সকাল আটটার ট্রেন যদি বেলা একটায় ছাড়ে, তখন কার মেজাজ ঠিক থাকে।’

নুরুজ্জামান স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ট্রেনে। ছবি: আসাদুজ্জামান
নুরুজ্জামান স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ট্রেনে। ছবি: আসাদুজ্জামান

নীলসাগর ট্রেন আজ এত দেরি কেন? জবাবে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট প্রদীপ কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নীলসাগর ট্রেনটি আগে থেকে দেরি হচ্ছে। ঈদের আগে এই দেরি কমার সম্ভাবনা কম। এত বিরক্তি এত ক্ষোভ সব নিমেষে দূর হলো যখন ট্রেনটি স্টেশন ছাড়তে শুরু করল। নুরুন্নাহার আর নুরুজ্জামান হাত উঁচিয়ে বলতে থাকেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করার কী যে আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না। সবাইকে ঈদ মোবারক।’

সুন্দরবন ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা লেটে এবং অন্য ট্রেনগুলো মোটামুটি সময়েই চলছে।