ঈদের ছুটিতে ডাকছে শ্রীমঙ্গল

সবুজের চাদর বিছানো শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান। ছবি: শিমুল তরফদার
সবুজের চাদর বিছানো শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান। ছবি: শিমুল তরফদার

ঈদের ছুটি শুরু হতে আর দুদিন বাকি। দু–এক দিনের মধ্যেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে শহরের কোলাহলে দিন কাটানো ক্লান্ত মানুষ এসে ভিড় করবেন সবুজের রাজ্য চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে। সবুজ চায়ের বাগানের ফাঁকে ফাঁকে থাকবে রংবেরঙের পোশাক পরা পর্যটকের ভিড়। এরই মধ্যে পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টগুলোতে শুরু হয়ে গেছে আগাম বুকিং। আর পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে শেষ সময়ে এসে হোটেল-রিসোর্ট ও পর্যটন স্পটগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। এবার কয়েক হাজার পর্যটকের ভিড়ে শ্রীমঙ্গল মুখর হবে, মনে করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শ্রীমঙ্গলের সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), চা জাদুঘর, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, বার্ড পার্ক, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১-সহ নানা স্পট ঘুরে দেখেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। এর পাশাপাশি রয়েছে লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, সুদৃশ্য জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, হিন্দুদের তীর্থস্থান সুপ্রাচীন নির্মাই শিববাড়ি।

চা-বাগানঘেরা উঁচু-নিচু টিলা ঘেঁষে এখানে গারো, খাসি, ত্রিপুরা, মণিপুরিসহ নানা জাতির বাস। চা-বাগান আর মণিপুরিপাড়ায় রয়েছে মণিপুরি হস্তশিল্পের বিশাল মেলা। পর্যটকেরা এসব জায়গায় ঘুরে ক্যামেরায় বন্দী করে নেন নিজের ছবিগুলো। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব স্থানে ঘুরে বেড়ান তাঁরা।

সন্ধ্যা নেমেছে হাইল হাওরে। ছবি: শিমুল তরফদার
সন্ধ্যা নেমেছে হাইল হাওরে। ছবি: শিমুল তরফদার

এখন শ্রীমঙ্গল ও আশপাশের এলাকায় ছোট-বড় অনেক হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, টি হ্যাভেন রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট, গ্রিনলিফ গেস্টহাউসসহ শতাধিক হোটেলে কয়েক হাজার পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা আছে। এসব হোটেল ও রিসোর্টে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন পর্যটকেরা।

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক আরমান খান বলেন, ঈদ উপলক্ষে তাঁদের বিশেষ প্যাকেজ আছে। এ প্যাকেজের আওতায় দুজনের জন্য প্রতি রাতে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৭৭ টাকা। এর মধ্যে সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার আছে। হোটেলের বিভিন্ন খেলাও খেলা যাবে এ প্যাকেজের আওতায়।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। ছবি: শিমুল তরফদার
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। ছবি: শিমুল তরফদার

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার আহ্বায়ক ও টি হ্যাভেন রিসোর্টের পরিচালক আবু সিদ্দিক মুসা বলেন, এরই মধ্যে তাঁদের রিসোর্টে ৫০ ভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের ছুটিতে তাঁদের রিসোর্ট পুরোটাই বুকিং হবে বলে আশা করছেন তিনি।

শুধু টি হ্যাভেন রিসোর্টই নয়, শ্রীমঙ্গলের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টই আগাম বুকিং পাচ্ছে। তা ছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন হোটেল-রিসোর্ট পর্যটকদের জন্য ছাড় দিয়ে বিশেষ বিশেষ অফার দিচ্ছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনের টিকিট না পাওয়ার কারণে অনেক পর্যটকই আগাম বুকিং দিয়েও আসতে পারছেন না। ফলে কিছু কিছু বুকিং বাতিল করতে হচ্ছে। এসব অসুবিধা দূর হলে পর্যটকেরা আরও বেশি সংখ্যায় এখানে আসবেন বলে মনে করেন আবু সিদ্দিক মুসা।

শ্রীমঙ্গলের বিশেষ আকর্ষণ ভাড়াউড়া লেক। ছবি: শিমুল তরফদার
শ্রীমঙ্গলের বিশেষ আকর্ষণ ভাড়াউড়া লেক। ছবি: শিমুল তরফদার

শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাপস দাশ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই ঈদ কিংবা অন্য কোনো বড় ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটি কাটাতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক শ্রীমঙ্গল আসছেন। এরই মধ্যে হোটেল বুকিংয়ের পাশাপাশি ট্যুর গাইডদেরও বুক করা হয়ে গেছে।

তাপস দাশ বলেন, ‘প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সিএনজি, রিকশা ইত্যাদি যানবাহনের ভাড়ার তালিকা শহরে লাগানো উচিত। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, পর্যটকদের সঙ্গে চালকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তা ছাড়া শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে যাওয়ার সময় ট্রেন ও বাসের টিকিটের চরম সংকটে পড়তে হয় পর্যটকদের। এই বিষয়গুলো প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান করছি।’

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাছে দেখা যাবে বানরের লাফালাফি। ছবি: শিমুল তরফদার
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাছে দেখা যাবে বানরের লাফালাফি। ছবি: শিমুল তরফদার

মৌলভীবাজার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ সার্কেল এএসপি) মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদসহ বিশেষ ছুটির দিনে শ্রীমঙ্গলে প্রচুর পর্যটক আসে। আমরা এসব পর্যটকের কথা ভেবে সব সময়ই নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখি। যেহেতু ঈদ উপলক্ষে প্রচুর পর্যটক শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে ঘুরতে আসেন, তাই আমরা তাঁদের কথা ভেবে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি পর্যটন স্পটে পুলিশ মোতায়েন করা হবে এবং সাদাপোশাকে সব জায়গায়ই পুলিশ সবকিছুর নজর রাখবে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে পর্যটকেরা যেন শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারেন, এ লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ চলছে।’