বিছনাকান্দি, রাতারগুল, জাফলং, গোয়াইনঘাটে কত কী

সিলেটের গোয়াইনঘাটের জল-পাথরের নদীখ্যাত বিছনাকান্দি হতে পারে আপনার ছুটি কাটানোর স্থান। ছবি: আনিস মাহমুদ
সিলেটের গোয়াইনঘাটের জল-পাথরের নদীখ্যাত বিছনাকান্দি হতে পারে আপনার ছুটি কাটানোর স্থান। ছবি: আনিস মাহমুদ

পাহাড়, ঝরনা আর সবুজের প্রাচুর্যে ভরা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। ভারতের সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় ছড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। সবুজে মোড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষা পাথুরে নদী, বন, চা-বাগান কী নেই এখানে! সিলেটের বৈচিত্র্যে ভরা সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন পর্যটক আর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। ঈদের মতো উৎসবে এসব পর্যটনকেন্দ্রে থাকে উপচে পড়া ভিড়।

গোয়াইনঘাট উপজেলা বিখ্যাত মূলত তিনটি পর্যটনকেন্দ্রের কারণে। এগুলো হচ্ছে জল-পাথরের নদীখ্যাত বিছনাকান্দি, মিঠাপানির একমাত্র জলারবন রাতারগুল এবং বহুমুখী সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাফলং। প্রতিবছরই ঈদের সময় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি হিসেবে এ তিনটি পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণপিপাসুদের কাছে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এসব পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এবার ঈদের বন্ধ বর্ষা মৌসুমে পড়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের কাছে এসব স্পটের আবেদন অনেকটাই বেশি থাকবে বলে স্থানীয় পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন।

জলারবন রাতারগুল ডাকে হাতছানি দিয়ে। ছবি: আনিস মাহমুদ
জলারবন রাতারগুল ডাকে হাতছানি দিয়ে। ছবি: আনিস মাহমুদ

পর্যটন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজন জানিয়েছেন, জল-পাথরের শয্যাখ্যাত বিছনাকান্দি এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক জাফলং ঘিরে বরাবরের মতো এবারও ভিড় থাকবে পর্যটকদের। বিছনাকান্দিতে জলবিহারের পাশাপাশি জাফলংয়ের পাথর, সীমান্তবর্তী জিরো পয়েন্ট, পার্শ্ববর্তী চা-বাগান আর ভরা পিয়াইন নদের বুকে নৌকায় ভেসে বেড়াতেও পর্যটকেরা আকৃষ্ট হবেন। এ ছাড়া শহর থেকে মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্বে অবস্থিত রাতারগুল। জলারবন রাতারগুলে জলমগ্ন গাছগুলো একে অপরের সঙ্গে গলাগলি করে রয়েছে। জলের ওপর জঙ্গুলে পরিবেশে তৈরি করা বুনো সৌন্দর্য, এ এক আলাদা মায়াবী টান। আর এ আকর্ষণেই সেখানে পর্যটকেরা যাবেন।

বিছনাকান্দির ঘাটে বাঁধা অনেক নৌকা। ছবি: আনিস মাহমুদ
বিছনাকান্দির ঘাটে বাঁধা অনেক নৌকা। ছবি: আনিস মাহমুদ

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে। তবে সাধারণত ঈদের পরদিন থেকে পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় শুরু হয়। তৃতীয় দিন থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। ঈদের ছুটির সঙ্গে শুক্র ও শনিবার থাকায় ভিড় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তাঁরা। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এবার ছুটিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই সপরিবারে সিলেট ছুটে আসবেন বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।

জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা। ছবি: আনিস মাহমুদ
জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা। ছবি: আনিস মাহমুদ

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিত কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও জাফলং পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ রাখতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও সার্বক্ষণিক উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চালু করা হয়েছে পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র।

ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পাল আরও বলেন, ঈদের দিন পর্যটকদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়বে। উপজেলা প্রশাসনের আনুমাণিক ধারণা, ঈদের ছুটিতে কেবল গোয়াইনঘাট উপজেলায় কয়েক লাখ পর্যটক আসবেন।

বিছনাকান্দির জলের বিছানায় যে কেউ ভাসতে পারেন। ছবি: আনিস মাহমুদ
বিছনাকান্দির জলের বিছানায় যে কেউ ভাসতে পারেন। ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ একটু অবসর পেলেই এখন সপরিবারে বেড়াতে বের হন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হওয়ায় সিলেটের রয়েছে অফুরান সম্ভাবনা। সেটাকে সঠিক ও যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত। পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে তৈরি করা উচিত। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এবার সবারই ধারণা, সিলেটে প্রচুর পর্যটক আসবেন। যাঁরা আসবেন, তাঁরা যদি পর্যটনকেন্দ্রিক সেবা ভালোভাবে পান, তাহলে ভবিষ্যতে পুনরায় সিলেটে আসতে আগ্রহী হবেন।’