মোবাইল অ্যাপে মিলছে রাজশাহীর আম

আম
আম

রাজশাহীর আমের অ্যাপভিত্তিক বিক্রয়সেবা চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু রাজশাহীর আম সরবরাহ করা হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চয়তা থাকবে ঘরে বসে রাসায়নিকমুক্ত আম পাওয়ার। প্রবাসীরাও এই অ্যাপের মাধ্যমে দেশে তাদের স্বজনদের কাছে রাজশাহীর আম পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন।

অ্যাপভিত্তিক আম বিক্রয়সেবার উদ্যোক্তা হাসান তানভীর ২০১৩ সালে তাঁর নিজের বাগানের আম ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে আম সরবরাহ শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবাকে আরও সহজ করার জন্য তিনি এবার মোবাইল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ চালু করেছেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে এক সপ্তাহ ধরে এই সেবা চলছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক গত বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে এর উদ্বোধন করেন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশে রাজশাহীর আমকে সারা দেশের ক্রেতাদের কাজে সহজ উপায়ে পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

উদ্যোক্তা হাসান তানভীর বলেন, অ্যাপটি যেকোনো স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যাবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ‘রাজশাহীর আম’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। এরপর নিজের তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এরপরই আগ্রহী ক্রেতা পৌঁছে যাবেন রাজশাহীর আমের ভুবনে। সেখানে আম–সম্পর্কিত ব্লগে আমের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। মৌসুমের কোন সময় কোন আম পাকে—এ তথ্য যেমন আছে; আছে আমবাগান করা, আমের পরিচর্যা এবং আম সংরক্ষণের যাবতীয় তথ্যও। দেখা যাবে আমের ছবি, বর্তমান দাম এবং যাঁরা আগে এই অ্যাপ থেকে আম কিনেছেন তাঁদের মতামত। দেখেশুনে প্রয়োজনমতো আমের পরিমাণ নির্ধারণ করে পেমেন্ট অপশনে যেতে হবে। মূল্য পরিশোধ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং, সরাসরি ব্যাংক পেমেন্টের পাশাপাশি প্রবাসীরা ব্যবহার করতে পারবেন ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার’ পদ্ধতি। কোনো ক্রেতার আরও কিছু জানার থাকলে এই অ্যাপের কল অপশন ব্যবহার করে বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলে নিতে পারবেন।

তবে চাইলেই যেকোনো সময়ে যেকোনো আম সরবরাহ করা হবে না। আম পাকার সময়সূচি অনুযায়ী মিলবে পছন্দের আম। এতে করে যে আমটি পরে পাকবে, সেটি এই অ্যাপের মাধ্যমে কোনোভাবেই আগে পাওয়ার সুযোগ নেই। প্রাকৃতিকভাবে আম পাকার স্বার্থেই উদ্যোক্তা এই নিয়ম অনুসরণ করছেন।

ফেসবুক থেকে অ্যাপে আসার কারণ জানতে চাইলে হাসান তানভীর বলেন, তাঁর ফেসবুক পেজে এখন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার অনুসারী। ক্রেতাদের সেখানে এত চাপ যে তাঁদের পক্ষে ক্রেতাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফোনকলের মাধ্যমে ফরমাশ নিতেই অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্রেতা মুঠোফোনে কথা বলে সময় নষ্ট করতেও চান না। তাঁরা অ্যাপে ঢুকে দেখেশুনে অর্ডার নিশ্চিত করতে পছন্দ করেন। এ ছাড়া ফেসবুকে এখন রাজশাহীর আম নামে একাধিক পেজ তৈরি হয়ে গেছে। এই ভিড়ে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে অ্যাপের আশ্রয় নিতে হয়েছে। এখানে কোনো ক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।

রাসায়নিকমুক্ত আম কীভাবে নিশ্চিত করবেন, তা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা হাসান তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীর বাঘায় তাঁর নিজের এবং ইজারা নেওয়া বাগান আছে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তিনি আমের পরিচর্যা করেছেন। এই বাগান ছাড়া বাইরে থেকে কিনে তিনি সরবরাহ করেন না। এ জন্য তিনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে তাঁর আম রাসায়নিকমুক্ত। আম শেষ হলেই তিনি অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেন।

সুমি খাতুন নামের ঢাকার একজন ক্রেতা অ্যাপে হিমসাগর আমের ছবির নিচে লিখেছেন, ‘আমার জন্য হিমসাগর প্রথম বুকিং রাখবেন। কারণ, গত বছর বুঝেছি হিমসাগরের ওপরে আর কোনো আম নেই। গত বছর আপনাদের কাছ থেকে অনেক আম নিয়েছি। এবারও নেব। আর এবার অ্যাপ চালু করে ভালো করেছেন।’