বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন নিমতলীবাসী

নিমতলীতে বাবা মামুন মিয়ার সঙ্গে ছোট্ট ফলের দোকানে বসে আছে ছেলে শ্রাবণ।  প্রথম আলো
নিমতলীতে বাবা মামুন মিয়ার সঙ্গে ছোট্ট ফলের দোকানে বসে আছে ছেলে শ্রাবণ। প্রথম আলো

৯ বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীর ৪৩ নবাব কাটরার নিচতলায় রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। মুহূর্তে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আগুন। এতে দগ্ধ হয়ে ১২৪ জন প্রাণ হারান। অগ্নিদগ্ধ হন আরও কয়েক শ মানুষ। কিন্তু এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে শাস্তিও হয়নি কারও। তবে বংশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছিল। সেটিরও তদন্ত হয়নি। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এখনো বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন। দগ্ধ ব্যক্তিদের শরীরের ক্ষত শুকিয়ে গেছে। কিন্তু মনের ক্ষত, ভয়াবহ সেই স্মৃতি আজও দগদগে।

নিমতলীর বাসিন্দারা বলেন, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা ও ভবনমালিক গ্রেপ্তার হলেও নিমতলীর ভবনমালিকের গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি ও তাঁর সন্তানেরা আয়েশে আছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটাই দাবি, শতাধিক মানুষের মৃত্যুর এ ঘটনায় মামলা ও সুষ্ঠু বিচার হোক।

নিমতলীর বাসিন্দা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মচারী মো. এসহাক প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে তাঁর বড় বোন পারভীন আক্তার ও দুই ভাগনি মারা গেছেন। তিনি বলেন, যার বাড়ির নিচে রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুন লাগে সেই বাড়িওয়ালা হাজি গুলজার আলী ও তার ছেলেরা আয়েশেই আছেন। নিমতলীর ঘটনায় মামলা ও বিচার হলে চুড়িহাট্টার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।

>

২০১০ সালের ৩ জুন রাতে নিমতলীতে আগুন লাগে
আগুনে দগ্ধ হয়ে ১২৪ জন প্রাণ হারান
মামলা হয়নি বলে শাস্তিও হয়নি, মনে করেন অনেকে
জিডি হলেও ওই জিডির তদন্ত হয়নি

বংশাল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসান বর্তমানে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। গত শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিমতলীর মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। থানায় একটি জিডি হয়েছিল। সেই জিডির সূত্র ধরে ১২৪ জনের মরদেহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই জিডির আর তদন্ত হয়নি।

৪৩ নবাব কাটরা ভবনটির নিচতলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পাঁচতলা সেই ভবনটি মেরামত করা হয়েছে, লোকজনও থাকছেন। ওই ভবন ঘেঁষে নিহত ব্যক্তিদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের উল্টো দিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকা দোতলা বাড়িটিতে এখনো কেউ থাকেন না। সেটি মেরামত করা হচ্ছে। আগুনে ওই বাড়ির বাসিন্দা ফরিদউদ্দিনসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়। বেঁচে যাওয়া ফরিদউদ্দিনের তিন ছেলে পাশের এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। এলাকার এমন আরও কয়েকটি ভবনের পোড়া চিহ্ন সে দিনের ভয়াবহতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কেউ নতুন করে ঘর ও দোকান বানিয়েছেন।

রাসায়নিকের গুদামের পাশে মুদিদোকানে পুড়ে মারা যান দোকানদার মো. শফিকের ভাই আবদুর রহিম ও পণ্য কিনতে আসা দুই নারী। পুড়ে ছাই হয়ে যায় দোকানটিও। ওই ভবনে থাকা রহিমের দুটি মেয়েও মারা গেছে সেদিন। শফিক জানান, এখন আর কেউ তাঁদের খোঁজও নেয় না।