রাজকীয় সেই পালঙ্ক গেল প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে

রাজা সীতারামের পালঙ্ক ব্যবহার করছেন মাগুরা জেলা প্রশাসক—এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে সেই পালঙ্ক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাগুরা, খুলনা, ৩ জুন। ছবি: সংগৃহীত
রাজা সীতারামের পালঙ্ক ব্যবহার করছেন মাগুরা জেলা প্রশাসক—এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে সেই পালঙ্ক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাগুরা, খুলনা, ৩ জুন। ছবি: সংগৃহীত

রাজা সীতারামের ব্যবহৃত পালঙ্ক মাগুরার জেলা প্রশাসকের বাংলোয় থাকা নিয়ে বিতর্ক শুরুর পর পালঙ্কটি দাপ্তরিকভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালকের প্রতিনিধিদলের কাছে পালঙ্কটি হস্তান্তর করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা। তিনি জানান, পালঙ্কের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পারে জেলা প্রশাসক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আলী আকবর মুঠোফোনে বলেন, পালঙ্কটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তবে এটা আসলেই সীতারামের কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য ওই দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ‘রাজপালঙ্কের খোঁজ মিলল বাসভবনে’ শিরোনামে ৩১ মে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খবর প্রকাশের পর ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ না করে ‘ব্যবহার’ করায় জেলা প্রশাসক আলী আকবর সমালোচনার মুখে পড়েন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠান জেলা প্রশাসক মো. আলী আকবর। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সূত্রে কেউ কেউ পালঙ্কটি প্রায় চার শ বছর আগের ভূষণার রাজা সীতারাম রায়ের বলে মতপ্রকাশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাচীন দলিল দস্তাবেজ অনুসন্ধান করেও কোনো তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আলী আকবর স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়, জীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী খাটটি দীর্ঘদিন ধরে মাগুরার জেলা প্রশাসকরা সংরক্ষণ করছেন। খাটটি রাজা সীতারামের কি না, যাচাই করে প্রাচীন নিদর্শন প্রমাণিত হলে সেটি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা প্রথম আলোকে বলেন, মাগুরার জেলা প্রশাসকের ওই আবেদনের ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পালঙ্কটি খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করার কথা বলেন। এ জন্য সোমবার সকালে অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদলের কাছে পালঙ্কটি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক।

এদিকে পালঙ্ক নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেন জেলা প্রশাসক। চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ফরিদ হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর রাজীব চৌধুরী, জেলা নাজির হরসিত কুমার শিকদার ও রেকর্ড রুম শাখার অফিস সহকারী মো. শফিকুল ইসলাম। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ফরিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তের কাজ চলমান। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে পালঙ্ক হস্তান্তর করার কথা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।