বই বাজারেও লেগেছে ঈদ!

ঈদে প্রিয়জনের জন্য বই দেখছেন এক ক্রেতা। পাঠক সমাবেশ, শাহবাগ, ৩ জুন। ছবি: মাকসুদা আজীজ
ঈদে প্রিয়জনের জন্য বই দেখছেন এক ক্রেতা। পাঠক সমাবেশ, শাহবাগ, ৩ জুন। ছবি: মাকসুদা আজীজ

ঈদের ছুটি লম্বা! মাঝে শুধু সোমবারের দিনটিতে যাঁরা ছুটি নিতে পেরেছেন, তাঁদের জন্য ঈদের ছুটি নয় দিন। আর স্কুল–কলেজে পড়ুয়াদের ছুটি তো প্রায় এক মাস। লম্বা এই ছুটিতে অনেকের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে বই। অনেকেই বই কিনছেন, কিনছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকার ঈদসংখ্যা। সব মিলিয়ে ঈদে বইয়ের বাজার বেশ চাঙা।

বইয়ের বাজার রাজধানীর শাহবাগ, নিউমার্কেট গিয়ে দেখা যায়, পোশাকের দোকানগুলোর পাশাপাশি বইয়ের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের সমাগম। বই আর কয়েকটি পত্রিকার ঈদসংখ্যা কিনছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাত্রি। প্রশ্ন করতে বললেন, ‘আমার বাড়ি সাতক্ষীরা। রাতের গাড়িতে বাড়ি যাব, ঈদের কারণে পথে জ্যাম হবে, ফেরিতে দেরি হতে পারে। এত সময়ে মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরে ক্লান্ত লাগে। তা ছাড়া পথে মোবাইলে চার্জও বাঁচিয়ে রাখতে হয়। ফলে ঈদের ছুটিতে বইয়ের চেয়ে ভালো সময় কাটানোর অনুষঙ্গ পাওয়া যায় না।’

বই কিনে অনেকেই ছবি দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁদের একজন জাহিদ। জাহিদ বলেন, ‘ঈদে হাতে টাকাপয়সা ভালো থাকে। স্বজনর অনেকেই পোশাক কিনে না দিয়ে টাকা দিয়ে দেন। একটি পাঞ্জাবি কেনার পরে বেশ টাকা থাকে হাতে। সেটা দিয়েই শখ মিটিয়ে বই কিনছি।’

নিজের জন্য বই কেনার পাশাপাশি উপহার দেওয়ার জন্যও বই কিনতে দেখা যায় অনেককে। স্কুলশিক্ষিকা ইশরাত জাহান শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে এসেছেন ছোটদের জন্য বই কিনতে। ইশরাত জানান, ঈদের দিনে সবাই পরিবারের ছোটদের টাকা দেন। তিনি ঈদি হিসেবে বাচ্চাদের বই দেবেন বলে ঠিক করেছেন। ছোটদের জন্য খুঁজে খুঁজে তাই এমন সব বই বের করছেন, যেগুলো ছোটবেলায় তাঁকেও খুব আনন্দ দিত।

ঈদে বই উপহার দেওয়ার বিষয়টিকে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রচার করছে বই কেনাকাটার ওয়েবসাইট রকমারি ডটকম। এর প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঈদে বই কেনা বা বই পড়ার অভ্যাস তৈরি একটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ। আমরা অনেক বছর ধরে মানুষের মধ্যে এই অভ্যাসটা তৈরি করতে চাইছি।’

বেশ কয়েক বছরের চেষ্টার ফলে এই বছর বই কেনাকাটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত ঈদের মাসে বই কেনাকাটায় ভাটা পড়ে এই বছর আমরা দেখছি খুব কম হলেও বই বিক্রি বেড়েছে।’

বই পড়া, কেনা ও সুন্দর সময় কাটানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৈরি হওয়া বইয়ের দোকান বেঙ্গল বুকেও ঈদের বেড়েছে বই বিক্রি। এমনই মতো প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতার হোসেনের। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দ্বিতীয় ঈদ। গত ঈদে আমরা দেখেছি বইয়ের ক্রেতা বলতে গেলে থাকেই না। এ বছর রোজার শুরুর দিকটা এমন গেলেও দ্বিতীয় শুক্রবার থেকে বইয়ের বিক্রি বেশ ভালো।’ বোনাসের টাকা দিয়ে অনেকে বই কিনছেন বলে মতো দেন আখতার।

শাহবাগের পাঠক সমাবেশে রোজার পুরো মাস ধরে চলেছে ইসলামি বইয়ের মেলা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ দাস বলেন, ‘মেলার কারণে হোক বা লম্বা ছুটির জন্য হোক রোজার মাসে আমাদের বিক্রি সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় অনেক পাঠক ক্রেতা দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন এবং কিনছেন।’ সব মিলিয়ে ঈদে বইয়ের বাজারের এভাবে জেগে ওঠায় দারুণ খুশি তিনি।