মাহমুদা হত্যাকাণ্ড: পুলিশ শুধু বলেই যাচ্ছে তদন্ত 'শেষের দিকে'

এসপির স্ত্রী হত্যা
এসপির স্ত্রী হত্যা

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যাকাণ্ডকে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছিল পুলিশ সদর দপ্তরে। সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে। পুলিশ সদর দপ্তর মনে করছে, এই মামলার তদন্ত সঠিকভাবে না হলে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শকসহ একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানান, মাস দেড়েক আগে চাঞ্চল্যকর মামলার তালিকা তৈরির একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ওই তালিকায় মাহমুদা হত্যাকাণ্ডের মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব আসে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

মাহমুদা হত্যা মামলার বিষয়ে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দেবে। এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানমকে (মিতু)। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। বাবুল তখন চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে ঢাকা পুলিশ সদর দপ্তরে এসপি (পুলিশ সুপার) পদে সংযুক্ত ছিলেন।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে ২৩ বার সময় নিয়েছেন। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি বলে আসছেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তিনি কখনো কোনো মন্তব্য করেননি।

মাহমুদা হত্যাকাণ্ডের মোড় ঘুরতে শুরু করে ২০১৬ সালের ২৪ জুন ডিবি কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর। এ সময় হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলো।

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি পুলিশ পরিবারের সদস্য হয়েও মেয়ে হত্যার বিচার পাচ্ছেন না। বাবুল যদি দোষী না হতো, তাহলে সেদিন ডিবি কার্যালয় থেকে ফিরে আসার পর চাকরি থেকে ইস্তফা দিল কেন? ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে তা নাকচই বা করা হলো কেন? নিশ্চয়ই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার দোষ খুঁজে পেয়েছে।

মোশাররফ হোসেনের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি।

মাহমুদা হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মো. ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা স্বীকার করেন, কামরুল শিকদার ওরফে মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে তাঁরা সাত-আটজন অংশ নেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে বাবুল চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় মুছা তাঁর ঘনিষ্ঠ সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। পরে মুছার সন্ধান চেয়ে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।

মাহমুদা খুন হওয়ার ১৭ দিন পর মুছাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানান মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। তবে পুলিশ বরাবরই মুছাকে গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে আসছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মাহমুদা হত্যায় অংশ নেন ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান মিয়া, মুছা ও মো. কালু। তাঁদের মধ্যে নবী ও রাশেদ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মুছা ও কালু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, অন্যরা কারাগারে।

মাহমুদা হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না, ২ জুন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমানের কাছে জানাতে চান সাংবাদিকেরা। এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে তিনি পুরোনো কথাই বললেন, তদন্ত শেষের দিকে।