১৯ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লঞ্চ পাননি খোরশেদ

লঞ্চের অপেক্ষায় তাঁরা। সদরঘাট, ঢাকা, ৪ জুন। ছবি: আসাদুজ্জামান
লঞ্চের অপেক্ষায় তাঁরা। সদরঘাট, ঢাকা, ৪ জুন। ছবি: আসাদুজ্জামান

মিরপুর থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে সদরঘাট আসেন খোরশেদ হাওলাদার। লঞ্চঘাটের প্রবেশপথ বন্ধ থাকায় রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরে যান তাঁরা। আজ সকাল সাতটায় আবারও সপরিবারে সদরঘাটে আসেন খোরশেদ। কিন্তু যাত্রীদের ভিড়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত লঞ্চঘাটে ঢুকতে পারেননি।

আজ দুপুর দুইটার দিকে খোরশেদ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যাবেন পটুয়াখালী। রাতে ঘাটে ঢুকতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যান। এখনো লঞ্চ পাননি।

অথচ রাত পোহালেই হতে পারে খুশির ঈদ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে আজ মঙ্গলবারও রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। সকালের পর যাত্রী চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেল, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় ছিল। এরপর এই চাপ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু বেলা তিনটার দিকে আবারও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে। এদের অনেকেই আজ ভোরবেলা সদরঘাটে এসেও লঞ্চের দেখা পাননি।

বরিশালে যাবেন মোহাম্মদ শহীদ। আজ ভোর পাঁচটার দিকে তিনি স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সদরঘাটে আসেন। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কোনো লঞ্চ পাননি। ক্ষুব্ধ শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লঞ্চ না পাওয়ায় ভোগান্তিতে আছি। বাড়ি যাওয়ার জন্য এত কষ্ট!’

স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সদরঘাটে আসেন খোরশেদ হাওলাদার। কিন্তু রাতে ভিড় থাকায় লঞ্চঘাটে ঢুকতে না পেরে বাসায় ফিরে যান। আবার আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় আসেন ঘাটে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোরশেদ আলম পটুয়াখালী যাওয়ার কোনো লঞ্চে উঠতে পারেননি। ছবি: আসাদুজ্জামান
স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সদরঘাটে আসেন খোরশেদ হাওলাদার। কিন্তু রাতে ভিড় থাকায় লঞ্চঘাটে ঢুকতে না পেরে বাসায় ফিরে যান। আবার আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় আসেন ঘাটে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোরশেদ আলম পটুয়াখালী যাওয়ার কোনো লঞ্চে উঠতে পারেননি। ছবি: আসাদুজ্জামান

আজ বেলা তিনটার দিকে শত শত যাত্রীকে লঞ্চঘাটের পন্টুনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পটুয়াখালীর যাত্রী রোজিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সন্তানকে নিয়ে ভোর ছয়টায় এসেও লঞ্চ পাননি। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।

যাত্রীরা বলছেন, ঈদের সময় যদি বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা রুটে পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকত, তাহলে যাত্রীদের এত ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো না।

পটুয়াখালী যাবেন নুরজাহান। শেওড়াপাড়া থেকে এসেছেন সকাল সাতটায়। লঞ্চঘাটে দাঁড়িয়ে নুরজাহান বলেন, ‘আর ভালো লাগছে না। আর কত অপেক্ষা করব। এভাবে কষ্ট করে ঈদে বাড়ি যাওয়ার চেয়ে না যাওয়া ভালো।’

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক নিয়াজ মোহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেল থেকে আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত দুই থেকে তিন লাখ যাত্রী সদরঘাটে আসেন। এত যাত্রীর তুলনায় লঞ্চের সংখ্যা কম। লাখের অধিক যাত্রী রাতে সদরঘাটে অবস্থান করেন। দুপুর ১২টার পর যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমেছে। তবে বিকেলে আবার যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে।

সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। পোস্তগোলা সেতু, ঢাকা, ৪ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। পোস্তগোলা সেতু, ঢাকা, ৪ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রীদের ভিড়ের কারণে সদরঘাটের লঞ্চঘাটে প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাত ৮ টা পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএর তথ্যকেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়, যাত্রীদের ভিড়ে অন্তত ৫০ জন নিখোঁজ হন। বিআইডব্লিউটিএর তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত ক্যাডেট কাউসার আহম্মেদ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত ১০০ জনের মতো নিখোঁজ হয়। এদের মধ্যে শিশু ৬০। অবশ্য পরে নিখোঁজ সবাইকে পাওয়া গেছে।