ছাত্রদল নেতাকে পুলিশ বক্সের ভেতরে পেটাল ছাত্রলীগ

বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হাসানকে ধাওয়া করছে হামলাকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হাসানকে ধাওয়া করছে হামলাকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে প্রচারণায় নেমেই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীরা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ছিল বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনের নির্ধারিত প্রতীক বরাদ্দের দিন। কমিশনের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ বেলা ১১টার দিকে বৈধ সাত প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে শহরের সাতমাথা এলাকায় প্রচারপত্র বিলি এবং গণসংযোগে নামেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বেলা একটার দিকে শহরের সাতমাথায় কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, সমবায় ভবনের সামনে এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাতে ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার ও পথচারীদের কাছে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হাসান এবং সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী।
সাতমাথার চারজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যস্ততম শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে একজন আখের রস বিক্রেতার কাছে ধানের শীষে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন ধানের শীষের কর্মীরা এ সময় তাঁদের ধাওয়া দেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলকার নাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ১০/১২ জন নেতা-কর্মী। আখের লাঠি হাতে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়ার মুখে বিএনপির সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদারসহ ছাত্রদলের নেতারা সাতমাথায় সরকারি কলেজসংলগ্ন ট্রাফিক বক্সের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের ধাওয়ার মুখে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু হাসান পুলিশ বক্সের ভেতরে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। এ সময় হেলালুজ্জামান তালুকদারসহ অন্যদের ওপরও হামলার চেষ্টা করা হয়। হামলাকারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় হাসানকে উদ্ধার করে শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে পাঠান।

এদিকে ছাত্রদলের নেতাকে মারধরের ছবি তুলতে গেলে হামলাকারীরা একাধিক ফটো সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পেশাগত কাজে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে ফটো সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক শহরের সাতমাথায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা ঈদের পর প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণার কথাও বলেন।

জানতে চাইলে বিএনপির সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যস্ততম শহরে লাঠি হাতে ধাওয়া দেন। পুলিশ বক্সের ভেতরে ছাত্রদলের সভাপতিকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। সাতমাথায় অর্ধশত পুলিশের দায়িত্বরত সদস্য সবাই নির্বিকার।

ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, মুখে যতই গণতন্ত্রের বুলি আওড়াক, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার মসনদের লোভে স্বৈরতন্ত্রের কলঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। ইভিএম ভোট। জয়-পরাজয় তাদের হাতে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই ভোটে অংশ নিচ্ছে। অথচ প্রচারণার প্রথম দিনেই ধানের শীষের কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় ভোট কতটা প্রভাবমুক্ত হবে।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস বলেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের স্লোগান দিলেও তাঁরা আসলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী। সাবেক নেতা-কর্মীদের কোনো দায় জেলা ছাত্রলীগ নেবে না।

ছাত্রদল সভাপতির ওপর হামলার বিষয়ে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টি জামান নিকেতার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কাছে এ ঘটনার বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, শহরের সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপের কারণে ট্রাফিকের বেশির ভাগ সদস্য সেসব স্থানে আছেন। ঘটনার সময় কেউ এখানে ছিলেন না। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজন। যেই জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৪ জুন ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে ভোট গ্রহণ হবে। উপনির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

ছাত্রদল নেতা আহত আবু হাসানকে নিয়ে যাচ্ছে সহকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
ছাত্রদল নেতা আহত আবু হাসানকে নিয়ে যাচ্ছে সহকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত


বগুড়া-৬ আসনটি জিয়া পরিবারের জন্য ‘সংরক্ষিত’ আসন হিসেবে পরিচিত । ১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি একচ্ছত্র দখলে ছিল বিএনপির। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ধানের প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী মুজিবর রহমান । ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সাল ছাড়াও বাতিল ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা চার দফা বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ভোট পান ৭৪ হাজার ৬৩৪।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির নুরুর ইসলাম ওমর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে মহাজোটের প্রার্থী নুরুল ইসলামকে হারিয়ে বিজয়ী হন। মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ায় ৩০ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ৪ মে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।