ঢাকার সড়ক যদি এমন হতো...
তখন বিকেল ৫টা। রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার থেকে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে হেঁটে বঙ্গবাজারের দিকে আসছিলেন খোরশেদ আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল গেটের প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়ান প্রেসের কর্মচারী খোরশেদ।
রাস্তায় তখন মোটেও যানজট নেই। কিছুক্ষণ পরপর দুই-একটা রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ছুটে চলছিল হাইকোর্ট মাজারের দিকে।
এমন ফাঁকা রাস্তা দেখে খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব দিন ঢাকার রাস্তা যদি এমন হতো, যানজট নেই, মানুষ যে যাঁর গন্তব্যে নির্বিঘ্নে ছুটে চলছেন।’
খোরশেদ আলম এই মন্তব্য করার পরক্ষণেই আবার আক্ষেপ করে বললেন, ‘জানি, এ আমার শুধুই কল্পনা। এমন ফাঁকা ঢাকা কোনো দিন হবে না। ঈদের পর আবার ঢাকা তার চিরচেনা রূপে ফিরে আসবে। রাস্তায় থাকবে যানজট, থাকবে মানুষের কোলাহল। মানুষ যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।’
প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহরের কত লোক ঢাকা ছেড়েছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে শহরের চিত্র বলছে, অনেক মানুষই এখন ঢাকার বাইরে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঢোকার প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ হারুন। বহু বছর ধরে তিনি ঢাকায় ঈদ করেন। হারুন বলছিলেন, ‘আজকের ঢাকা দেখতে অনেক সুন্দর। গাড়ির পর গাড়ি নেই। হর্নের প্যা পো আওয়াজ নেই। মানুষের কোলাহল নেই। মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে যে যার গন্তব্যে যেতে পারছেন।’
হারুন বলে ফেলেন, এমন ফাঁকা ঢাকায় কেবল ঘুরতে মন চায়।
রাজধানীর সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যে যানজট প্রতিদিনই থাকে, আজ ওই সড়কে দেখা গেল ব্যতিক্রম চিত্র। সড়কের দুই পাশের দোকানপাট সব বন্ধ। বিকেল সাড়ে ৪টার পর গুলিস্তান থেকে দু-একটা বাস সদরঘাটের দিকে যেতে দেখা যায়। রাস্তা দখল করেছে রিকশা। রিকশায় করে যাতায়াত করছেন লোকজন। তবে গুলিস্তান মোড়ে যানজট ছিল। অবশ্য তা অন্যান্য দিনের মতো নয়। বিকেল সাড়ে ৫টার পর শাহবাগ-শেরাটন মোড় ছিল একেবারই ফাঁকা।
হোটেল শেরাটনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী হাসান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময় ঢাকার রাস্তায় চলাচল করতে অনেক আনন্দ। চিরচেনা যানজট নেই, বাচ্চাদের নিয়ে নির্বিঘ্নে ঘোরাঘুরি করা যায়।
ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় মাঝেমধ্যে কিছু যানবাহন ছুটে চলছে। বাংলামোটর মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী আবুল কাশেম বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় আজ যানজট নেই। এমন ফাঁকা রাস্তা দেখে খুব ভালো লাগছে। মানুষের হুড়োহুড়ি নাই, গাড়িঘোড়া নাই। হাটতে অনেক আনন্দ।’