ঈদে ইকরার পাহাড় দেখা

বাবার সঙ্গে ইকরা আর ইভান। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান
বাবার সঙ্গে ইকরা আর ইভান। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান

আকাশে মেঘের ঘনঘটা। থেমে থেমে পড়ছে বৃষ্টি। ঘুম থেকে ওঠার পর এমন বৃষ্টি দেখে মন খারাপ হয়ে গেল ছোট্ট ইকরার।

ইকরা তার ভাই ইভানকে বলল, ‘ভাইয়া, দেখছ আজ কেমন বৃষ্টি। আমরা বোধ হয় ঘুরতে যেতে পারব না।’
বিমর্ষ ইকরা এবার গেল বাবা আবু সায়ীদের কক্ষে।

ইকরা কাঁদো কাঁদো গলায় বাবাকে বলল, ‘বাবা, ঈদের দিন আজ এ কেমন বৃষ্টি হচ্ছে। এমন বৃষ্টি হলে আমরা কী ঘুরতে যাব না।’ অভয় দিয়ে সায়ীদ ইকরাকে বলেন, ‘ইকরা মামণি, যত বৃষ্টিই হোক, আমরা ঘুরতে যাব।’

ইভানকে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বাবা আবু সায়ীদ ঈদের নামাজ পড়তে যান। আর ইকরা গোসল শেষে সেমাই খেয়ে নতুন জামা পরে নেয়। বাবা আর ভাইয়ের বাসায় ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকে ইকরা।
বাসায় ফিরে সায়ীদ ইকরাকে বললেন, ‘ইকরা মামণি, তুমি কী রেডি।’ ইকরা বলল, ‘হ্যাঁ, বাবা, আমি রেডি।’

ইকরার কথা শুনে ইভানও বলল, ‘ইকরাও রেডি, আমিও রেডি।’

শিশু মেলায় মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে যমজ রাইসা আর ওয়ারিসা। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান
শিশু মেলায় মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে যমজ রাইসা আর ওয়ারিসা। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান

খাওয়া-দাওয়া শেষে বেলা ২টার দিকে ইকরা আর ইভান বাবার সঙ্গে ছাতা মাথায় করে ঘর থেকে বের হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে চলে আসে শ্যামলীর শিশু মেলায় (ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড)।
তখনো ঝরছে বৃষ্টি। ৬০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটলেন সায়ীদ। ইকরা আর ইভানকে নিয়ে ঢুকে গেলেন শিশু পার্কে। শিশু মেলায় ঢুকেই ইকরা ইভানকে বলল, ‘ভাইয়া, কী সুন্দর হাঁস।’

পানির ওপর ছয় থেকে সাতটি রঙিন প্লাস্টিকের হাঁস ঘুরছে। হাঁসের মধ্যে ছোট ছোট সোনামণিরা বসে আছে। সোনামণিদের মাথায় ছাতা ধরে আছে তাদের বাবা-মা।
ইকরা বাবাকে বলল, ‘বাবা, আমি হাঁসের ওপর চড়ব।’ ইকরা আর ইভান হাঁসের ওপর বসল। লাটিমের মতো ঘুরতে থাকল তারা। আনন্দে আত্মহারা ইকরা। তখন একটা গান কানে আসল ইকরার। যে গানটি ইকরার সব থেকে প্রিয়। রোজ গুনগুনিয়ে গায় সে।
‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী
সাথি মোদের ফুলপরি…।’

ইকরা দেখল, তার মতো ছোট ছোট সোনামণিরা বসে আছে রঙিন ঘোড়ায়। ঘোড়াগুলো চক্রাকারে ঘুরছে। ইকরা-ইভানও ঘোড়ায় চড়ল। ঘুরতে শুরু করল ঘোড়া। শুরু হলো গান। ইকরা ইভান তখন স্বপ্নের রাজ্যে।

শিশু মেলায় পাহাড়। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান
শিশু মেলায় পাহাড়। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান

ইকরা দেখল, শিশু মেলায় পাহাড়। পাহাড়ের ওপরে শিশুরা দাঁড়িয়ে আছে। ঘোড়া থেকে নেমে ইভান ইকরাকে নিয়ে পাহাড় দেখতে দিল ছুট।
বাবা সায়ীদ সতর্ক করে দিয়ে ইভান আর ইকরাকে বলল, ‘পাহাড়ে সাবধানে ওঠো। পড়ে যেও না।’
পাহাড়ের আদলে তৈরি এই পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ইকরা ইভানকে বলল, ‘ভাইয়া, খুব ভালো লাগছে, তাই না।’
ইভানও ইকরাকে বলল, ‘খুব মজা হলো আজ, তাই নারে ইকরা।’
পাহাড়ের নিচে গুহা। গুহার ভেতর ট্রেনলাইন। এর নিচে পানি। পানির ওপরে সাদা কবুতরের মূর্তি।

ইকরা বাবার কাছে বায়না ধরল, ‘বাবা, আমরা এই ট্রেনে উঠব।’ ইকরা আর ইভান ট্রেনে উঠল। পানির ওপরে আসার পর ইকরা মনে মনে ভয় পেল।
ইকরা মনে মনে বলল, ‘যদি ট্রেন ছিটকে নিচে পড়ে যায়!’
গুহার ভেতর দিয়ে চলা ট্রেনে চড়ার পর ইকরার চোখেমুখে বিস্ময়।
বাবা সায়ীদকে ইকরা বলল,‘বাবা, আরও অনেক কিছু দেখব।’
সায়ীদ এবার ইকরা আর ইভানকে নিয়ে গেলেন দোলনার কাছে।
ইকরা-ইভান পাশাপাশি বসে দোলনায় চড়ল। সেখান থেকে ইকরা একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেল। থ্রি-ডি সিনেমা থিয়েটার।

গুহার মধ্যে ট্রেন। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান
গুহার মধ্যে ট্রেন। ৫ জুন, ঢাকা। ছবি: আসাদুজ্জামান

ইভান-ইকরা দুজনে বাবাকে বলল, ‘বাবা, ওই ঘরের ভেতর কী?’ সায়ীদ বলল, ‘ওখানে অনেক ছবি দেখা যায়। দেখবে তোমরা?’
বাবার মুখে এই কথা শুনে ইকরা এক পায়ে খাঁড়া।
ইভান-ইকরা থ্রি-ডি সিনেমা থিয়েটারে ঢুকে পড়ল। চোখের সামনে জীবন্ত নানা প্রাণীর ছবি।
ইকরা ইভানকে বলল, ‘ভাইয়া, কত বড় সাপ!’
এক বছর ধরে ইভান আর ইকরা বাবাকে বলে রেখেছিল, ঈদের দিন তারা ঘুরতে যাবে।
বৃষ্টিমুখর ঈদের দিন। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও সায়ীদ ছাতা হাতে নিয়ে ইকরা আর ইভানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন।

প্লাস্টিকের হাঁস। ছবি: আসাদুজ্জামান।
প্লাস্টিকের হাঁস। ছবি: আসাদুজ্জামান।

সায়ীদ শিশু মেলার ভেতরে দাঁড়িয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইকরা আর ইভানকে কথা দিয়েছিলাম, ঈদের দিন ওদের নিয়ে ঘুরতে বের হব। আজ সারা দিন অনেক বৃষ্টি। তারপরও ওদের আনন্দের কথা ভেবে ঘুরতে বের হয়েছি।’
ইকরা আর ইভান ছোট্ট গাড়ি চালায়।
ইকরা প্রথম আলোকে বলল, ‘বৃষ্টির মধ্যেও ঘুরতে হয়েছি। বাবা নিয়ে এসেছেন। আমাদের খুব ভালো লাগছে। অনেক আনন্দ।’
ইভানও বলল, ‘ঈদের দিন ঘুরতে অনেক মজা। আজ অনেক কিছু দেখলাম। অনেক ভালো লাগছে।’
ঈদের দিন ঘুরতে নিয়ে আসায় বাবা সায়ীদকে ধন্যবাদ জানায় ইকরা-ইভান।